জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, হাওরের ফসল কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, এ মাসের শেষ দিকে ধেয়ে আসতে পারে আগাম বন্যা
শ্রমিক সংকট ও আগাম বন্যার আশংকায় সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধানকাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লাখো কৃষক। প্রতিবছর এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক হাওর এলাকায় ধান কাটতে গেলেও এবার করোনাভাইরাসের আতঙ্কে অন্য জেলা থেকে যাওয়া শ্রমিক নেই বললেই চলে। ফলে ধানকাটা নিয়ে অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছেন হাওর এলাকার লাখ লাখ কৃষক।
অন্যদিনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়ায় আগাম বন্যায় ফসলহানির ভয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক। এদিকে জেলার কৃষিবিভাগ বলছে, হাওরের ফসল কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এ মাসের শেষ দিকে আগাম বন্যা হতে পারে।সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের কৃষক জজ মিয়া বলেন, এবার ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। হাওরে অল্প অল্প পানি জমেছে। এখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
আজমান হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর হাওরে শ্রমিকেরা ধান কাটতে আসছে না। হাওরের ধান কাটা হচ্ছে ধীর গতিতে। এভাবে চলতে থাকলে হাওরের ধান কাটা নিয়ে কৃষক সমস্যায় পড়বেন।খরচার হাওরের পাড়ের কৃষক শামছুল ইসলাম বলেন, হাওরের ২৮ জাতের ধান পুরোপুরি পেকে গেছে। কয়েকদিন পর ২৯ ধান পাকবে। এ অবস্থায় হাওরে ধানকাটার জন্য হাজার হাজার শ্রমিক লাগবে। দ্রুত শ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও অকাল বন্যার শংকার মধ্যেই সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বোরো ধান কাটা মাড়াই চলছে। চলতি বছর হাওরে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৫ এবং হাওরের বাইরে ৫৮ হাজার ১৯৫ হেক্টরসহ মোট ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, হাওরে আবাদকৃত ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৫ জমির ১০ ভাগ জমির ধান পেকেছে। বাকী ধান এক সপ্তাহের মধ্যে পেকে যাবে। একটি কম্পাইন্ড হারভেস্টর ৩ হেক্টর ও একটি রিপার দৈনিক ২ হেক্টর জমির ধান কাটতে ২৫ জন শ্রমিক লাগে। ধান কাটার জন্য ১২৬টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২১২টি রিপার মেশিন জেলায় সরবরাহ করেছে স্থানীয় কৃষিবিভাগ। আজ (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এছড়া হাওরে ৩০ হাজার শ্রমিক ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।নাজিম উদ্দিন জানান, এ বছর করোনাভাইরাসের ভয়ে অন্যান্য জেলা থেকে শ্রমিকরা ধান কাটতে না আসায় ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কৃষক জবান আলীর মতে, এ বছর হাওরের পানি দেরিতে নামায় বোরো আবাদ একমাস দেরি হয়েছে এ কারণে ধান পুরোপুরি ধান পাকতে অনেক বিলম্ব হচ্ছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওর এলাকার শ্রমিকের সংকট নতুন কোনো সমস্যা নয়। হাওরের ধান কাটতে আরও বেশি ধান কাটার মেশিন এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় অন্য জেলা থেকে শ্রমিক আনার দাবি জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, “ভারতের মেঘালয়, আসাম ত্রিপুরা ও বরাক অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এ কারণে জেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা, খাসিয়ামারা, চলতিসহ সকল নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামবে। চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে ভারী বর্ষণের সঙ্গে ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নেমে আসতে পারে তাই দ্রুত ফসল কাটা উচিত।”জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, “হাওরের ১০ ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো ধানকাটা শুরু হবে। এখন ২৮ ধান পাকছে। আগামী সপ্তাহে ২৯ জাতের ধান পাকতে শুরু করবে। এখন পর্যন্ত ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। তবে হাওরের সব ফসল পাকতে ও কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে।”
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, “ফসল কাটার শ্রমিকের সংকট দূর করতে প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওরে অনেক শ্রমিক ধান কাটছেন।”