সিলেট-ছাতক রেলওয়ের তিনটি স্টেশন অনিয়ম ও দূর্নীর আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার এ সড়কে খাজাঞ্চিগাঁও, সৎপুর ও আফজালাবাদ স্টেশন পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে। এ সড়কে অনিয়মিত ট্রেন চলাচল করলেও স্টেশনগুলো প্রায় তালাবদ্ধ রয়েছে। যাত্রীদের আনাগোনা, স্টেশন মাস্টারসহ রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদচারনা নেই। তবে ছাতক রেল স্টেশনে স্ব-পরিবারে মহব্বত আলী নামে একজন রাজত্ব করছেন অভিযোগ উঠেছে। ঝুঁকি নিয়েই যত্রতত্র থামছে ট্রেইন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ রেল ক্রসিংয়ে প্রায় পনের মিনিট ধরে রেল থামিয়ে মালামাল নামানো হয়। এতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের এই অংশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ সময় এসএসসি ও দাখিল সমমানের পরিক্ষার্থীরাসহ ও যাত্রী সাধারন চরম হয়রানীর শিকার হন। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্টিত এই রেলপথে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল করে আসছিল। ছাতক থেকে সিমেন্ট, চুনা পাথর, সিলপার, বালু বোল্ডার ও ভাঙা পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার জন্য নির্মিত রেল লাইনটি এই অঞ্চলের যাত্রী সাধারন পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্টা লাভ করে। ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় জনবল সংকট ও সংস্কারের অভাবে অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ছাতক বাজার রেলওয়েতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে ও কংক্রিট স্লিপার কারখানা। ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ, পাথর কোয়ারী, কংক্রিট স্লিপার কারখানা, ও রেলওয়ে স্টেশন, রেষ্ট হ্উাজ, গোদাম, বাসা-বাড়িসহ কয়েক শত একর ভূমিতে মূল্যবান স্থাপনাকে পুঁজি করে এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে হরিলুট চলছে। সব মিলেয়ে ছাতক রেল তলাহিীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে।
বিগত সময়ে লক্ষ-লক্ষ টাকার মালামাল, রেলওয়ে ষ্টেশন, রোপওয়ে ব্যাংকার, সিএসপিতে রাখা রেলওয়ের বিশাল অংক মূল্যের স্ক্যাপমাল চুরি হয়েছে মর্মে থানায় জিডি এন্ট্রি করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়। কতৃপক্ষের নিকট এসব অভিযোগ কেবল তদন্তেই সীমা বদ্ধ অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজেসে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রেলওয়ে কলোনির ৭৬টি স্টাফ কোয়াটারর মধ্যে প্রায় ৩০টিতে বসবাস করে আসছে বহিরাগতরা। রেল স্টেশনের সাবেক কর্মচারী দু’সহোদয় মহব্বত আলী ও শওকত আলী ৫-৬টি বাসা দখল করে গরু ও হাঁসের খামারসহ বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন অভিযোগ উঠেছে। এই দু’সহোদ মিলে বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টায় ছাতক রেল স্টেশনে ১০ টাকার টিকেট ১২ টাকায় বিক্রি করছেন। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে রেলওয়ের বাসা বরাদ্দ বাতিল করে ভাড়া না দিয়ে বাসায় বসবাস ও একাধিক কোয়াটার দখল করে ভাড়া দিয়ে অনেকেই মাসোহারা নিচ্ছেন। অন্যদিকে স্টেশন মাস্টার আব্দুল মতিন ভূইয়া সিলেটে বসেই নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। স্টেশনের জনৈক কর্মচারীর মাধ্যমে হাজিরা খাতা সিলেটে নিয়ে পূরো মাসের স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন।
বর্তমানে ছাতক রেল স্টেশনে মহব্বত আলীর রাজত্ব চলছে। রেলওয়ের পুরাতন রেষ্টহাউজসহ বিআর-৩ এ , বিআর-৩০ এ, বিআর-৬ এ, বিআর-৭ এবি, বিআর-৮এবি বিআর-৬ ডিসহ প্রায় ১৫ টি বাসা বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। একাধিক বাসা ও কলনিতে অসামাজিক কার্যকলাপ, মদ-গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল সেবন ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ছাতক রেলওয়ে এলাকায় অপরাধ, অপরাধী ও লুটপাটের মহোৎসব চলছে। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ২টার দিকে ছাতক রেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশন মাস্টার, টিকেট কাউন্টারসহ প্রায় সবকটি কক্ষ বন্ধ রয়েছে। এসময় স্টেশনে শোনশান নিরবতা লক্ষ করা যায়। ক্ষনিকটা পর একটি কক্ষ থেকে একজন বেরিয়ে আসেন। সোর্সিং স্টাপ মো. আব্দুল কাইয়ুম নাম পরিচয় দিয়ে বলেন, অন্যনরা দুপুরের খাবার খেতে গেছেন। পরে তিনি ¯ী^কার করেন স্টেশন মাষ্টার সিলেটে রয়েছেন। ততক্ষনে মহব্বত আলী নামে একজন এ প্রতিবেদকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন। সোর্সিং স্টাপ মো. আব্দুল কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি (মহব্বত আলী) বাঁধা প্রদান করেন।
তার ছবি তুলতে চাইলে ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে এ প্রতিবেদকে হুমকি দেন মহব্বত আলী। আরো জানা যায়, ছাতক রেল স্টেশনের সাবেক কর্মচারী এই দু’সহোদয় মহব্বত আলী, শওকত আলী স্বপরিবারে দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনে রাজত্ব করে আসছেন। কিন্তু কতৃপক্ষের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী/কার্য ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ছাতক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল নূর বলেন, রেলওয়ে (কলোনী) স্টাফ কোয়ার্টারে অবৈধ ভাবে যারা রয়েছেন তাদের একটি তালিকা উর্দ্বতম কতৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি এসেছি মাত্র ২ মাস হয়্। আমার পূর্বে যেসকল কর্মকর্তারা ছিলেন তারা অনেকগুলো বিষয় উর্দ্ধতম কতৃপক্ষকে জানিয়েছিন।
রেলের জায়গায় (নদীর পার) যারা অবৈধ ভাবে বালু রেখে দখল করেছেন ইতোমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসে তদন্ত করে গেছেন। তবে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বেশি কথা বলতে নারাজ। স্টেশন মাষ্টার আব্দুল মতিন ভূইয়া বলেন, যান্ত্রিক সমস্যা, দূর্ঘটনা জনীত কারন ছাড়া স্টেশন ব্যতিথ মধ্যখানে ট্রেন থামার কোন নিয়ম নেই। দু’সহোদয় মহব্বত আলী ও শওকত আলী বৈধ ভাবে রয়েছেন। বরং স্থানীয়রা-ই অবৈধভাবে কোয়াটার দখল করে আছেন। তিনি আরো বলেন, জনবল সংকট রয়েছে তাই বহিরাগতদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। টিকেটের বডিতে মুল্য লেখা রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোন সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় জনবল ও রক্ষণাবেক্ষনের ব্যবস্থা এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত লুটেরা-অপরাধীদের চিহ্নিত করে সরকারী সম্পাদ রক্ষা ও উদ্ধারসহ সিলেট-ছাতক রেল স্টেশন আধুনিকায়ন করার দাবী জানান যাত্রী সাধারন।