স্টেশনমাস্টারের ছত্রচ্ছায়ায় টিকিট কালোবাজারি


বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হচ্ছে না। টিকিট বিক্রির পদ্ধতি যত আধুনিক হচ্ছে অপকর্মের ধরনও তত পাল্টে যাচ্ছে। এর সঙ্গে রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি স্টেশনমাস্টার জড়িত থাকার অভিযোগ মিলেছে। এ কারণে অগ্রিম টিকিট ছাড়ার দিন থেকেই সেটি কালোবাজারিদের হাতে চলে যাচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন আন্তঃনগর ও লোকাল মিলে ৪০টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এ স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। স্টেশনটি তিন জেলার সীমানা এলাকায় হওয়ায় প্রচুর টিকিটের চাহিদা থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে কালোবাজারি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে বর্তমানে ট্রেনের সংখ্যা বাড়লেও যাত্রীরা কাউন্টারে তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্টেশন মাস্টার জড়িত থাকার কারণে টিকিট কালোবাজারিরা দাপটের সঙ্গে প্রকাশ্যেই টিকিট বিক্রি করছে। বুকিং অফিস ও প্ল্যাটফর্মে দুজন করে মোট চারজন কালোবাজারিকে দিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিটগুলো বিক্রি করানো হয়। দালালদের অনেকে আবার বুকিং অফিসের কম্পিউটারে বসে টিকিট চেক করে থাকেন। প্রয়োজনে টিকিটগুলো বের করে নিয়ে এসে বাইরে বিক্রি করেন। স্টেশন মাস্টারের ছত্রছায়ায় এই ঘটনাগুলো হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারে না।

ঢাকাগামী যাত্রী হৃদয় হোসেন জানান, কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেয়ে নিরুপায় হয়ে ১০০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে দ্রুতযান এক্সেপ্রেসের একটি টিকিট কিনতে হলো। কাউন্টারে পেলে ১০০ টাকা বেঁচে যেতো।

আরেক যাত্রী রোজী আক্তার বলেন, সিট পাওয়ার আশায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকায় কালোবাজারিদের কাছে থেকে টিকিট কিনেছি।

সরেজমিনে বুকিং অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারের প্রবেশ মুখে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের ২টা টিকিট বিক্রয় হবে’ লিখে মোবাইল নাম্বার দিয়ে লাগানো রয়েছে একটি পোস্টার। যা রেলওয়ের নিয়ম-নীতি পরিপন্থী। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছে না আবার কেউ কাউন্টারে না দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে ফিরছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, কালোবাজারির জন্য স্টেশন মাস্টারই বেশি দায়ী। তিনি এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। শুধু তাই নয় টিকিট কাউন্টারের পাশে ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশের দোকানেও প্রকাশ্যেই মিলছে ঢাকাগামী টিকিট। এসব কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আশপাশের দোকানিরাও দিন দিন টিকিট কালোবাজারিতে ঝুঁকে পড়ছেন।

কাউন্টারের প্রবেশ মুখে টিকিট বিক্রির পোস্টারের বিষয়ে সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম ডালিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, স্টেশনটি ক্লিন রাখার চেষ্টা করছি। এতে কিছু মানুষ আমার বিরোধিতা করে। আর টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে আমি কিংবা আমার অফিসের কেউই জড়িত নই।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *