স্ত্রী-শাশুড়ির সঙ্গে বিরোধে ৬ মাসের ছেলেকে হত্যা করল বাবা


স্ত্রী ও শাশুড়ির সঙ্গে বিরোধে ছয় মাসের ছেলেকে হত্যা করেছে জোবায়ের হোসেন চৌধুরী (২৭) নামে এক যুবক। গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) শরীয়তপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় শিশুটির মা আইরিন আক্তার বাদী হয়ে গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) জাজিরা থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে ঘটনাটি রোববার (১৯ জানুয়ারি) জানাজানি হয়।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২ আগস্ট শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সন্তোষপুর (লক্ষ্মীর মোড়) গ্রামের আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ছেলে জোবায়ের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দক্ষিণ ক্রোকচর গ্রামের আছলাম খার মেয়ে আইরিন আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে আরফিন নামে একটি ছেলেসন্তান হয়। বিয়ের পর থেকেই জোবায়েরের সঙ্গে তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো।

এ নিয়ে স্ত্রী ও শাশুড়ির ওপর ক্ষোভ জন্মে জোবায়েরের। সেই ক্ষোভে তার ছয় মাসের শিশুসন্তান আরফিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জোবায়ের। তিনি ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে স্ত্রী আইরিন আক্তারকে ছেলেসহ মাদারীপুর সদরের ছিলারচর বাজারে দেখা করতে বলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আইরিন ছেলে আরফিন ও বান্ধবী পুতুলকে নিয়ে ছিলারচর বাজার সংলগ্ন একটি নার্সারিতে দেখা করতে যান। পরে জোবায়ের তার বাবা-মাকে দেখানোর কথা বলে আইরিনের কোল থেকে ছেলেকে নিয়ে যান। জোবায়ের ছেলেকে ফেরত না দেয়ায় মাদারীপুর আদালতে মামলা করেন আইরিন। পরে শরীয়তপুর সদরের সন্তোষপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র জোবায়েরকে গ্রেফতার করে।

৯ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার চরশিমুলিয়া গ্রামের দীপক দেবনাথের বাড়ির পূর্ব পাশে একটি পুকুর থেকে শিশু আরফিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১০ জানুয়ারি আইরিন আক্তার বাদী হয়ে স্বামী জোবায়েরের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. বাদল তালুকদার আদালতে আসামির দুদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জোবায়ের স্বীকার করেন, স্ত্রী ও শাশুড়িরর ওপর ক্ষোভ অভিমান করে গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জাজিরা উপজেলার চরশিমুলিয়া গ্রামের আসমত খার নির্জন বাঁশবাগানের ভেতরে বসে তিনি তার শিশুসন্তান আরফিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে রাতে মরদেহ দীপক দেবনাথের পুকুরে ফেলে দেন।

নিহত আরফিনের মা আইরিন আক্তার বলেন, ছেলেকে আমার কোল থেকে নিয়ে হত্যা করেছে জোবায়ের। ও আমাকে সন্তান হারা করেছে। আমি ওর ফাঁসি চাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাজিরা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বাদল তালুকদার বলেন, শিশু আরফিনকে হত্যা করেছে তার বাবা জোবায়ের হোসেন চৌধুরী। গত ১৬ জানুয়ারি শরীয়তপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি।