চব্বিশ ঘণ্টা সেবা নিশ্চিত হয়নি উপজেলা হাসপাতালগুলোতে। ইতোপূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী দেশের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ২৪ ঘণ্টা সেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। উপজেলা হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সেবা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার জন্য তিনি তাগিদ দেন। এজন্য চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবলের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি। উপজেলা হাসপাতালগুলো যেমন ছিলো তেমনই রয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে সেবার মান আরও নিচে নেমেছে বলেই ভূক্তভোগীদের অভিমত।
দেশের প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে একটি করে ৫০ শয্যার হাসপাতাল। এইসব হাসপাতালে রোগীরা সার্বক্ষণিক সেবা পায় না। অনেক হাসপাতালে খ-কালীন সেবাটুকুও পায় না রোগীরা। সার্বক্ষণিক সেবা তো অনেক দূরের বিষয়। হাসপাতালগুলোতে বিরাজ করছে নানা সমস্যা। অনেককেই বলতে শোনা যায় হাসপাতালগুলো রোগীর সেবা করবে কি, তারা নিজেরাই তো রোগী। উপজেলা হাসপাতাল বা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর করুণ অবস্থা বর্ণনা করে পত্র-পত্রিকায় প্রায় সময়ই লেখালেখি হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। প্রথমত এইসব হাসপাতালে চিকিৎসক নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাব রয়েছে।
সেই সঙ্গে আছে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় সময়ই বলা হয়, উপজেলা হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ সরঞ্জাম পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে; নিয়োগ দেয়া হচ্ছে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। অথচ বাস্তবে সরকারের এই ধরনের বক্তব্যের প্রতিফলন চোখে পড়ে না। আমাদের হাসপাতালগুলোর এই অবস্থা খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বিভিন্ন সময় অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায়ে হাসপাতালে শয্যা বাড়ালেও প্রয়োজনীয় নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা কম থাকায় রোগীর সেবায় বিঘœ ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক অনুপাতে নার্স এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে কর্মরতদের মধ্যে দায়িত্ব সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।
উপজেলা হাসপাতালগুলোর দূরবস্থার কথা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল অন্যান্য ব্যক্তিবর্গও স্বীকার করেছেন। সুতরাং এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও সরকার কার্পণ্য করবে না বলেই আমরা আশা করি। আর এজন্য প্রথমেই হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের উপজেলা হাসপাতালে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা সেখানে নিয়মিত উপস্থিত থাকে না। কেউ কেউ ‘মাঝে মধ্যে’ হাসপাতালে উপস্থিত হন। উপজেলা হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে জরুরি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হলে, সেটা হবে একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্মরণ করা যেতে পারে ইতোপূর্বে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে এক নির্দেশনায় উপজেলা হাসপাতালে সার্বক্ষণিক জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। অন্তত আদালতের সেই নির্দেশনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে হলেও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে সেবার মান বাড়িয়ে সার্বক্ষণিক সেবা চালু করা হবে বলেই আমরা আশাবাদী।