১০ টাকা কেজিতে চাল পাবে গ্রাম পুলিশ


>> ৪৫ হাজার ৬৯০ সদস্য পাবেন এ সুবিধা
>> মোট চালের প্রয়োজন হবে ৯৫৯৭ টন
>> সরকারের ভর্তুকি ৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকা

গ্রাম পুলিশকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদমর্যাদা দিতে এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বেতন স্কেলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে বেতন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন করে আরও একটি সুখবর পাচ্ছেন গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। শিগগিরই প্রত্যেক সদস্য ১০ টাকা কেজিতে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বছরের সাত মাস তাদের এ সুবিধা দেয়া হবে। গ্রাম পুলিশের ৪৫ হাজার ৬৯০ সদস্যকে এ সুবিধা দিতে মোট নয় হাজার ৫৯৭ টন চালের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে ৩২ কোটি ১৪ লাখ তিন হাজার ৫৩০ টাকা। সম্প্রতি এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতি চেয়ে অর্থ সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব রায়না আহমদের গত ১ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এটি সরকারের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একক। ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ বাহিনী ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ)’ গ্রাম পুলিশ বাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলি সম্বলিত বিধিমালা, ২০১৫ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

প্রাথমিকভাবে গ্রামপর্যায়ে পাহারা ব্যবস্থা চালুর জন্য কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি করে ইউনিয়ন পরিষদ সৃষ্টি হলেও কালক্রমে প্রতিষ্ঠানটি তৃণমূল পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা, আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কর্তৃক পরিচালিত ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড একজন ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ও ১০ জন পুলিশ দ্বারা সম্পাদিত হয়।

গ্রাম পুলিশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন দফাদার ও নয়জন করে মহাল্লাদার কর্মরত। গ্রাম পর্যায়ে চুরি-ডাকাতি রোধ করাও তাদের কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ভিজিডি ও ভিজিএফ চাল বিতরণ; গ্রাম আদালত পরিচালনা কাজে সহযোগিতা, নোটিশ সার্ভ, ট্যাক্স সংগ্রহ কাজে সহযোগিতা থেকে শুরু করে তারা ইউনিয়ন পরিষদ তথা স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণের জন্য গৃহীত সকল প্রকার কাজের সহযোগিতা প্রদান করেন।

এতে আরও বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত গ্রাম পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সরকারি স্কেলভুক্ত কোনো কর্মচারী নন। দফাদাররা সাত হাজার টাকা এবং মহল্লাদাররা ছয় হাজার ৫০০ টাকা মাসিক বেতন পান, যা নিতান্তই অপ্রতুল। এছাড়া চাকরি শেষে সরকারি কর্মচারীদের মতো পেনশনও পান না। ফলে তাদের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়। সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের সর্ববৃহৎ কর্মসূচি ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় স্বল্পমূল্যে চাল সরবরাহ করা হলে তাদের জীবন ধারণ সহজ হবে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বছরে সাত মাস সারাদেশে ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গ্রাম পুলিশদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন সহায়তার লক্ষ্যে স্বল্পমূল্যে চাল/গম সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। গ্রাম পুলিশদের সামাজিক নিরাপত্তামূলক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক সম্মতিক্রমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভায় উপস্থাপন করেন।

ওই সভায় গ্রাম পুলিশকে (দফাদার ও মহল্লাদার) খাদ্যভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তামূলক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে দেশের চার হাজার ৫৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদে একজন করে মোট চার হাজার ৫৬৯ জন দফাদার এবং প্রতি ইউনিয়নে নয়জন করে মোট ৪১ হাজার ১২১ জন মহল্লাদার নিযুক্ত রয়েছেন। দফাদার ও মহল্লাদারদের মোট সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬৯০ জন। ৪৫ হাজার ৬৯০ জন গ্রাম পুলিশকে মাসিক ৩০ কেজি হিসাবে চাল দিলে প্রতি মাসে এক হাজার ৩৭১ টন চাল প্রয়োজন। সাত মাসে মোট চালের প্রয়োজন হবে নয় হাজার ৫৯৭ টন।

প্রতি কেজি চালের ক্রয়মূল্য ও অন্যান্য খরচ ধরে ৪৩ টাকা ৪৯ পয়সা হলে নয় হাজার ৫৯৭ টন চালের দাম হবে ৪১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩০ টাকা। অন্যদিকে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের কাছে প্রতি কেজি ১০ টাকা হারে বিক্রি করলে টাকা পাওয়া যাবে নয় কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি বছর সরকারকে মোট ভর্তুকি দিতে হবে ৩২ কোটি ১৪ লাখ তিন হাজার ৫৩০ টাকা।

এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের ৪৫ হাজার ৬৯০ গ্রাম পুলিশকে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতাভুক্ত করার বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত সম্মতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর দেশের গ্রাম পুলিশদের সরকারি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদমর্যাদা দিতে এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করে তা প্রদানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানা গেছে।