চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক বাংলাদেশ। গত ২১ জানুয়ারি থেকে শুধুমাত্র আকাশপথে দেশে আসা চারটি ফ্লাইটে চীনফেরত যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ডহেল্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটারে (জ্বর মাপার যন্ত্র) হেলথ স্ক্রিনিং শুরু হয়।
করোনাভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লে সরকার অধিকতর সতর্কতা স্বরূপ বর্তমানে আকাশপথের পাশাপাশি সকল নৌ, স্থল ও সামদ্রিক বন্দর দিয়েও বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং শুরু করে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৭৪ হাজার ৯১১ জনের হেলথ স্ক্রিনিং সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশেও বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ১৬ হাজার ২৩ জন দেশি-বিদেশি যাত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে স্ক্রিনিং করা হয়েছে ৭ হাজার ৮১৩ জনের।
সম্প্রতি বিদেশ ফেরত সর্বমোট প্রায় ৭৫ হাজার যাত্রীর মধ্যে সর্বাধিক আকাশপথে আগত ২৪ হাজার ২১৯ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং সম্পন্ন হয়। তাদের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে ১৯ হাজার ৪৫৯ জন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৫৬৬ জন ও সিলেট বিমানবন্দরে ৪ হাজার ১৯৪ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৩৬১ জন ও খুলনা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৬৩ জন অবশিষ্ট যাত্রী বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে অবশিষ্ট যাত্রীর স্ক্রিনিং সম্পন্ন হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৭ হাজার ৮১৩ জনের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তার মধ্যে আকাশপথে শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে ৮ হাজার ২১০ জন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৪৮৮ জন ও সিলেট বিমানবন্দরে ৪৩৪ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়। একই সময়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৬৫ জন ও খুলনা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৪৩ জন এবং অবশিষ্ট যাত্রীর স্ক্রিনিং বিভিন্ন স্থলবন্দরে সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, আকাশপথে চীনসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ আসছে। তবে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আগতদের বেশিরভাগ ভারত থেকে আগত যাত্রী। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা যাত্রীদের মধ্যে ফিলিপাইন, রাশিয়া, দুবাই, ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা ও রোমানিয়ার নাগরিক রয়েছেন। খুলনার মংলা বন্দরের যাত্রীরা পানামা ও হংকংয়ের নাগরিক।
গত ডিসেম্বরে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৬৩ জন। বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮১৩ জন এবং সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ২ হাজার ১৫২ জন।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে রোববার সিঙ্গাপুরে একজন বাংলাদেশি নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২০০২ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্সকেও (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ছাড়িয়ে গেল। সে সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ২৪টিরও বেশি দেশে মোট ৭৭৪ জন প্রাণ হারান, আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৯৮ জন।