৭ দিনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত দেয়ার নির্দেশ


রাজধানীসহ সারাদেশের ফার্মেসি থেকে আগামী সাত দিনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ফেরত দেয়ার নির্দেশনা জারি করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।

বুধবার (১৯ জুন) অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি বরাবর এ চিঠি দেয়া হয়।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত দেয়া প্রসঙ্গে এক চিঠিতে বলা হয়, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত নিতে অপারগতা প্রকাশ করে, তাহলে বিষয়টি বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি বা মহাসচিব ও ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বরাবর চিঠি পাঠাতে হবে। এছাড়া সেই চিঠির একটা কপি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে প্রদান করতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিচালিত এক অভিযানে রাজধানীর শতকরা ৯৩ ভাগ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রয়েছে ও বিক্রি হচ্ছে বলে এক সেমিনারে বলা হলে, তা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। উচ্চ আদালত শীঘ্রই বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহারের নির্দেশনা প্রদান করে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিও আমদানিকারকদের কাছে ফেরত দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করার পাশাপাশি  এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি ও জারি হয়েছে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফার্মেসিতে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মজুদ সংরক্ষণ করা যাবে না। সংরক্ষিত অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ  ওষুধ পাওয়া গেলে ফার্মেসির লাইসেন্স বাতিল ও সিলগালাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ফার্মেসি পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ফার্মেসি পরিদর্শনপূর্বক মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ শনাক্ত করে তার রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ অনধিক ১০ দিনের মধ্যে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দিতে হবে।

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস আগে ফার্মেসি মালিকরা ওষুধগুলো ফেরত প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ওষুধ উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। ক্রেতাদেরও ওষুধ ক্রয়ের সময় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিতে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

কোনো ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রয় করা হলে কিংবা বিক্রয় প্রস্তাব করলে ওই ফার্মেসির বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর অথবা ওষুধ প্রশাসনের জেলা বা বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দাখিলের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়।

ওষুধের মেয়াদ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম (মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঘষামাজা বা কেটে ম্যাপ পরিবর্তন) ইত্যাদি পরিলক্ষিত হলে সে সম্পর্কে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর অথবা ওষুধ প্রশাসনের জেলা/বিভাগীয় কার্যালয় অবহিত করতে বলা হয়েছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ওষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিভিন্ন ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকাটা অস্বাভাবিক। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে যেকোনো ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর ফার্মেসিগুলো তা একটি নির্দিষ্ট কন্টেইনারে মজুদ রাখে এবং সেই কনটেইনারে ‘এ ওষুধ বিক্রয়ের জন্য নয়’ লেখা থাকে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শতকরা ৯৩ ভাগ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা মোটেই সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ যেন কোথাও বিক্রি না হয়, সেজন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সব সময় সতর্ক রয়েছে। এসবের দায়ে গত ছয় মাসে এ সংক্রান্ত ৩৭০টি মামলা ও ৫৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *