জ্বালানি তেল বিশ্ববাজারে একটি বিশাল অংশ দখল করে আছে। বাংলাদেশের বাজারেও রয়েছে তার চাহিদা। বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের বাজার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। একসময় সরকার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল জনগণের মধ্যে সরবরাহ করলেও বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম থাকায় সেই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।

কিন্তু এরই মধ্যে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক আগুনে গলিয়ে অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরির মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার রোস্তম আলী নামে এক শিক্ষার্থী।

রোস্তম আলীর আগে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভটভটিচালক ইদ্রিস আলী পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল ও কালি উৎপাদন করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।

এবার পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল আগুনে পুড়িয়ে অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন করে সাড়া ফেলেছেন রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার শফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক। বিষয়টি আশান্বিত করেছে স্থানীয়দের।

শফিকুল ইসলাম বাঘাইছড়ি উপজেলার মাস্টারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন শফিকুল। পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল গলিয়ে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরি করছেন তিনি।

তার উৎপাদিত জ্বালানি তেল ব্যবহার করে গাড়ি চালিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে স্থানীয়রা। শফিকুলের উৎপাদিত তেল ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা।

স্থানীয় মোটরসাইকেল চালক মো. হামিদ মিয়া বলেন, বাজারে যে অকটেন পাওয়া যায় তা ব্যবহারে অনেক সময় গাড়িতে সমস্যা দেখা দেয়। তবে কয়েক দিন ধরে শফিকুলের উৎপাদিত অকটেন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। এমনকি বাজারের অকটেনের চেয়ে অর্ধেক দামে পাচ্ছি।

স্থানীয় কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, কৃষি মৌসুমে প্রচুর ডিজেল লাগে সেচ কাজে। শফিকুলের কাছ থেকে কম দামে ডিজেল পাচ্ছি। এতে আমাদের সেচ কাজে খরচও কম হচ্ছে। তার উৎপাদিত ডিজেল দিয়ে মেশিন চালিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পড়িনি। পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যায়, এটা প্রথমে বিশ্বাস না হলেও এখন ব্যবহার করে বিশ্বাস করছি। আমাদের জ্বালানি সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো।

এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ির উঠানে একটি বদ্ধ তেলের ড্রামে বেশকিছু পরিত্যক্ত পলিথিন রেখে আগুন দিয়ে তাপ দেই। পরে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল আগুনে পুড়িয়ে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও এলপি গ্যাস তৈরি করি। বাজারে যে দামে তেল বিক্রি হয় তার চেয়ে অনেক কম দামে আমি বিক্রি করছি। এখন স্থানীয়রা আমার কাছ থেকে তেল নেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি সম্ভাবনাময় একটি শিল্প হবে।

তিনি বলেন, বদ্ধ ড্রামের ভেতর আগুনে গলে পরিত্যক্ত পলিথিন। তরল গলা সে পলিথিন বাষ্পীভূত হয়ে পাইপ দিয়ে বের হয় ফোঁটায় ফোঁটায়। পরে পরিশোধিত হয়ে বোতল-জেরিকেনে বিন্দু বিন্দু করে জমে তৈরি হচ্ছে অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও এলপি গ্যাস।

এমন অভিনব উদ্ভাবন দেখতে শফিকুলের বাড়িতে হাজির হন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবীব জিতু। পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল আগুনে পুড়িয়ে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও এলপি গ্যাস উৎপাদিত হতে দেখে বিস্মিত হন এই সরকারি কর্মকর্তা।

ইউএনও আহসান হাবীব জিতু বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল আগুনে পুড়িয়ে তেল উৎপাদিত হতে দেখে আমি অভিভূত। তবে শফিকুলের উৎপাদিত তেল পরিবেশবান্ধব কিনা সেটি পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে এখানে কীভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা করা যায় এবং বাণিজ্যিকভাবে কীভাবে বিস্তার করা যায় তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *