সংঘাত-প্রতিহিংসার রাজনীতি


বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে প্রতিহিংসা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে৷ যদিও আমরা জানি, রাজনীতিতে প্রতিহিংসার কোনো স্থান নেই৷ রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা থাকতে পারে না৷ বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা এবং রাজনীতি সচেতন৷ বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি এবং তখনকার সেই রাজনীতি আমাদের দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে৷ এখন আমাদের দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটছে৷ তাই আমার মনে হয়, প্রতিহিংসার রাজনীতি পেছনে ফেলে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে৷ যে কোনো প্রকারের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিহারের সময় এসেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে আগামীর পথপানে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির প্রকাশ বিভিন্ন সময়ে  বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঘটেছে৷ আর এই ধারা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচদশক পরও অব্যাহত আছে যা অপ্রত্যাশিত। প্রতিহিংসার এই রাজনীতির সবচেয়ে বড় শিকার হলো দেশের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী৷

বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে হিংসাবিদ্বেষ এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ গত দুই দশকের রাজনীতিতে এই দ্বন্দ্বসংঘাত বেশ প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ হলো মানসিকতার সংকট৷ এই হিংসাবিদ্বেষ উচ্চ পর্যায় থেকে দলের নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। কর্মীরা এতে বিভ্রান্ত হন৷ তাঁরা এই বিদ্বেষ এবং বৈরিতাকে এগিয়ে নিয়ে যান৷ এটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য ভালো কোনো পন্থা নয়৷ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে একটা আস্থার সম্পর্ক রাখা দরকার৷ পারস্পরিক আস্থা এবং বিশ্বাসের সম্পর্ক যদি না থাকে, তাহলে কোনো দেশেই গণতন্ত্র বিকশিত হয় না৷ এই আস্থা বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করতে হলে পরস্পরের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্থ করা যাবে না৷ বরং এগিয়ে যেতে দিতে হবে৷ দুটো বড় দল যদি ঐক্যবদ্ধভাবে  ন্যূনতম বিষয়ে একমত না হতে পারে, তাহলে কিন্তু হিংসাবিদ্বেষসংঘাত রাজনীতি থেকে দূর করা সম্ভব নয়৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আরেকটি প্রকাশ ঘটে মামলার মাধ্যমে৷ যারা যখন ক্ষমতায় আসে, তারা তখন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে৷ আবার ক্ষমতার পরিবর্তন হলে সেই মামলা প্রত্যাহার করা হয়৷

রাজনৈতিক এই সংঘাত আমরা যদি বন্ধ করতে না পারি, তাহলে উন্নয়নশীল দেশের পথে আমাদের যে পথ চলা, তা মুখ থুবড়ে পড়বে৷ বাংলাদেশে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট৷ এখানে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে৷ মতাদর্শিক বিরোধিতা থাকবে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতির জায়গায় আমাদের এক হতে হবে৷ তবেই আমরা গড়তে পারবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ।

লেখক :  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বহির্বিশ্ব জাতীয়তাবাদী ফোরাম।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *