ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। লালচে আভা ছড়িয়েছে কেবল পূর্ব আকাশে। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লার টিকিট কাউন্টারের সামনে আবালবৃদ্ধবনিতার ভিড়। দুই টাকা মূল্যে টিকিট কেটে একে একে ভেতরে প্রবেশ করছেন সবাই।
কেল্লার ভেতর প্রবেশ করে কেউ সবুজ ঘাসের শিশিরে পা ভেজাচেছন। কেউ দ্রুত পায়ে হাঁটায় ব্যস্ত। কেউবা আবার হাত -পা ছুড়ে ব্যায়ামে ব্যস্ত। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেল্লার বিভিন্ন রাস্তায় শত শত মানুষের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। এমন দৃশ্যপট লালবাগ কেল্লার নিত্যদিনের।
পাঠক হয়তো ভাবছেন কাকডাকা ভোরে লালবাগ কেল্লায় দুই টাকা প্রবেশমূল্যের টিকিট কেটে প্রতিদিন শত শত নারী, পুরুষ ও শিশুর কেন এমন ভিড়। লালবাগের শহীদনগরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের কাছে আগমনের কারণ জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, দুই টাকায় সুস্থ থাকার দাওয়াই মেলে লালবাগের কেল্লায়। প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজ পড়েই পায়ে হেঁটেই চলে আসেন কেল্লার গেটে। দুই টাকা প্রবেশমূল্যে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করে মনোরম সবুজ ঘাস, ফুলের বাগান ও ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে ঘণ্টাখানেক হেঁটে বেড়ান। সূর্য উঠার আগেই বাসা ফিরে গোসল করে নাস্তা খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। এখানে নিয়মিত হাঁটার ফলে অসুখ বিসুখের বালাই নেই। লালবাগ কেল্লায় ভোরের এ আয়োজনকে তিনি সুস্থ থাকার দাওয়াই বলে অভিহিত করেছেন।
বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের মতো লালবাগ কেল্লায় আগত বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশুদের একই অভিমত। টিকিট কাউন্টারে কর্তব্যরত কর্মচারী জানালেন, এমনিতে লালবাগ কেল্লায় প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। কিন্তু ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য প্রবেশমূল্য ২টাকা। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার লোক কেল্লার ভেতর হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করেন।
আজ (রোববার) সকালে প্রতিবেদক সরেজমিন পরিদর্শনকালে লালবাগ কেল্লায় টিকিট কেটে প্রবেশ করে চৌহদ্দি সীমানা জুড়ে অসংখ্য মানুষকে হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করতে দেখেন। সাত সকালে মনোরম পরিবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সবাই হাঁটাহাঁটি করছেন। টানা ঘণ্টাখানেক হাঁটাহাঁটি করে অপেক্ষাকৃত বয়স্করা হাঁপিয়ে ঘাসের ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সকাল ৮টা বাজার আগেই হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম শেষ করে সবাই একে একে বাইরে বেরিয়ে যান।