বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক অস্বীকারকারী সিনেটরদের ঢাকা সফর

banglashangbad

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের আমন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক অস্বীকারকারী যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের পাঁচজন স্টেট সিনেটরের বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের ঝড় বইছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে তারা ঢাকার উদ্দেশে নিউইয়র্ক ছাড়েন। ওই সফরের নেতৃত্বে রয়েছেন সিনেটর লুইস সেপুলভেডা। সফরে সিনেটরদের সঙ্গে থাকবেন আরও ৩ সদস্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সর্বশেষ নিউইয়র্ক সফরের সময় সিনেটর লুইস সেপুলভেডা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ সফরে আসতে আগ্রহের কথা জানান।

প্রায় চার বছর আগে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ নিউইয়র্ক স্টেটে প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয় এবং এতে সিনেটরদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। ওই সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে নিউইয়র্ক স্টেটে গৃহীত রেজ্যুলেশনের বিষয়টি আমলেই নেননি, এমনকি বিষয়টি নিয়ে ওই সময়ে তিনি কোনো প্রতিবাদও করেননি।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের পাঁচজন স্টেট সিনেটর যথাক্রমে- লুইস সেপুলভেদা, জেমস স্কুফিস, লিরয় কমরি, জন ল্যু ও কেভিন এ পার্কার এর হঠাৎ করে বাংলাদেশ সফর নিয়ে প্রবাসীদের মাঝে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিউইয়র্কসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শহরগুলোতে প্রবাসীদের আলোচনার খোরাক হয়েছে।

হঠাৎ করে এই পাঁচজন সিনেটরের বাংলাদেশ সফর নিয়ে আপত্তি তুলেছিল নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট। এমনকি পাঁচ সিনেটর কনস্যুলেটে ভিসার আবেদন করলে তা স্থগিতও রাখা হয়েছিল। কিন্তু ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের দ্রুত ভিসা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে কনস্যুলেটের কোনো পরামর্শ গ্রহণ করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রেজ্যুলেশন গ্রহণে সহায়তাদানকারীদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি নিয়ে বাংলাদেশে সফরের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে সমাবেশ করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যুক্তরাষ্ট্র শাখা। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহান মৃধা বেনু।

তিনি বলেন, যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সেনা শাসক জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে স্বীকার করে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে তাদের সমূলে উৎপাটন করতে হবে।

তিনি বলেন, বিদেশে থেকে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের সঙ্গে নিয়ে পাঁচ সিনেটর বাংলাদেশ সফরে গেছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারী বকুল, মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, আকাশ খান, সবিতা দাশ, উইলি নন্দী, শুভ রায় প্রমুখ।

এদিকে, পাঁচজন সিনেটর বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় তারা বাংলাদেশের বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। একইসঙ্গে তারা সিলেট ও কক্সবাজার সফর করবেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে নানাভাবে বড় ধরনের সহযোগিতা করেছেন এই সিনেটররা।

বৈঠকে সিনেটর লুইস বলেন, তিনি নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তার এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে তার নির্বাচনী এলাকায় বাংলাদেশিরা নিউইয়র্কের জন্য অনেক কিছু করছে বলেও সন্তোষ প্রকাশ করেন ওই সিনেটর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়ন করছে ও কোটি মানুষের জীবনের পরিবর্তন এনেছে উল্লেখ করে তিনি এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রাখায় বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ধন্যবাদ দেন তিনি।

আগামী ২৬ অক্টোবর তারা ঢাকা ত্যাগ করবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের জন্য আরও কিছু প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে বলেও জানা গেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *