প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি


আন্তজাতিক ডেস্ক ::  অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রুখতে নারীদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি রয়েছে। যুক্তরাজ্যে এ বড়ি চালু হয়েছিল ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে। সম্প্রতি পুরুষদের জন্যেও এক ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি মানবদেহে নিরাপদ কি না, তা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আমেরিকার নিউ অর্লিনসে অনুষ্ঠিত এন্ডোক্রিন ২০১৯ নামের এক মেডিকেল সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা এসেছে।

সম্মেলনে বলা হয়েছে, এই বড়ি দিনে একটি করে খেতে হবে পুরুষদের। এতে এক ধরনের হরমোন আছে যা পুরুষের দেহে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধে কাজ করবে। পুরুষদের জন্য বর্তমানে কনডম এবং ভ্যাসেকটমি ছাড়া আর কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেই। তবে এ বড়ি বাজারে আসতে সময় লাগবে প্রায় এক দশক।

সম্মেলনে আরও বলা হয়, পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি চালুর ব্যাপারে সামাজিক ও বাণিজ্যিক ইচ্ছার ঘাটতি আছে। কিন্তু একাধিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অনেক পুরুষই বলেছেন, এ রকম বড়ি পাওয়া গেলে তারা তা ব্যবহার করবেন। এক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা নিয়ে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পুরুষের বড়ি খাওয়ার কথা কি তার নারী সঙ্গী বিশ্বাস করবে?

২০১১ সালে একটি জরিপ চালায় যুক্তরাজ্যের অ্যাংগলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটি। জরিপে দেখা যায়, ১৩৪ জনের মধ্যে ৭০ জন নারী উত্তরদাতা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তাদের পুরুষ সঙ্গীটি হয়তো বড়ি খেতে ভুলে যাবেন। এছাড়া জীববৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জও আছে। পুরুষদের জন্য হরমোনভিত্তিক বড়ি তৈরির সময় বিজ্ঞানীদের নিশ্চিত করতে হবে যে, যৌন অনুভূতি বা পুরুষাঙ্গের উত্থানশক্তি যেন কমে না যায়।

একজন সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষের অণ্ডকোষে প্রতিনিয়তই নতুন শুক্রাণু তৈরি হতে থাকে। এ উৎপাদন পরিচালনা করে নানা ধরনের হরমোন। পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি তৈরি করতে হলে এমনভাবে প্রক্রিয়াটি বন্ধ করতে হবে, যাতে হরমোনের স্তর কমে গিয়ে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএ বায়োমেড নতুন এই বড়ি তৈরি করেছে। গবেষকরা বলছেন, তারা ৪০ জনের ওপর প্রথম পর্বের পরীক্ষা চালিয়েছেন। এতে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন তারা। গবেষকরা আরও বলছেন, এ বড়ি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ২৮ দিন ধরে ইলেভেন বেটা এম এন টিডিসি নামের ওই বড়িটি খেয়েছেন, তাদের হরমোনে স্তর কমেছে। তবে বড়ি খাওয়া ছেড়ে দেবার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এদের অল্প পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছিল। পাঁচজন তাদের যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া এবং দুই জন তাদের পুরুষাঙ্গের উত্থান শক্তি কিছুটা কমে যাওয়ায় কথা জানিয়েছেন। তবে তাদের যৌন ক্রিয়াশীলতা কমেনি। তাদের কেউই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বড়ি খাওয়া বন্ধ করেননি। সবার দেহেই এটি নিরাপদ বলে পাস হয়েছে।

গবেষক প্রফেসর ক্রিস্টিনা ওয়াং বলছেন, এই বড়ি শুক্রাণু উৎপাদন কমাবে কিন্তু যৌন ইচ্ছা আগের মতই থাকবে বলে ফলাফলে দেখা গেছে। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া হিসেবে এটা কতটা কার্যকর হবে তা জানতে হলে আরও বড় আকারে এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে পরীক্ষা চালাতে হবে।

সূত্র : বিবিসি


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *