সিনেমার পরিচালক এখন হোটেল বয়


‘সিনেমা বানিয়ে নিঃস্ব পরিচালক এখন হোটেল বয়’ এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত খবর এটি। ‘গন্তব্য’ নামের সিনেমাটি নির্মাণ করতে গিয়ে জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেছেন। তাতেও সিনেমার অর্থের জোগান না হওয়ায় সুদে ঋণ নেন।

কোনোমতে ছবিটির নির্মাণ শেষ করতে পারলেও সব হারিয়ে নিঃস্ব নির্মাতা ছবির মুক্তি দিতে পারছেন না। উল্টো বেঁচে থাকার তাগিদে তাকে বেছে নিতে হলো হোটেল বয়ের কাজ।

খবরটি প্রকাশ হলে শোবিজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই অরণ্য পলাশের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

তবে অনেকেই এই নির্মাতাকে সমালোচনায় ধুয়ে দিচ্ছেন। চোখে পড়ছে ফেসবুকের অনেক লেখা। অনেক নির্মাতা, পরিচালক, অভিনেতা মুখ খুলছেন। কেউ বলছেন সর্বস্ব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে সিনেমা বানানোকে শিল্পচর্চা বলে না। এটাই নিজের ও পরিবারের লোকদের ওপর একটা অত্যাচার।

কেউ আবার দাবি করছেন, একজন শিক্ষিত লোক, মোহনা টিভিতে কাজের অভিজ্ঞতাও আছে তার। সিনেমা বানাতে পারেন। তার একটি চাকরি কোথাও হলো না? কেন তাকে হোটেলে গিয়ে কাজ করতে হলো ২৫০ টাকা রোজে? এই প্রশ্নের সঙ্গে আরও প্রশ্ন যোগ করে অনেকে বলছেন, এটা কোনো ধান্ধাবাজির জন্য নয় তো? সবার সিমপ্যাথি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাষ্ট্রের তহবিলের টাকা নেয়ার ধান্ধা। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়েও ফাঁদ পেতেছেন তিনি, এমন অভিযোগও উঠছে।

অরণ্য পলাশ ছবিটি শুরু করেছিলেন পাঁচজন সহকারী পরিচালক নিয়ে। প্রথম দিনের শুটিংয়েই একজন বাদ পড়েন। বাকি চারজনকে নিয়ে সিনেমার কাজ শেষ করেন তিনি। তাদের একজনের নাম নজরুল। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করা নজরুল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছবিটি শেষ করেছেন অরণ্য পলাশ। অনেকের টাকা এখনো বাকি আছে।

ছবিটিতে তার স্ত্রীর টাকাই বেশি মনে হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হচ্ছিলো সিনেমা শুটিংয়ের সময়। এলিনা শাম্মী সিনেমায় টাকা দিলেও ব্যক্তিগতভাবে অরণ্য পলাশকে কোনো টাকা দিতে চাইতেন না। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব হতো। আভাস পেতাম। সেজন্যই হয়তো স্ত্রী থাইল্যান্ডে থাকলেও অরণ্য পলাশকে করুণ দিন পার করতে হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে কী না সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। আমার মনে হয়নি তারা স্বামী স্ত্রী।

তবে আমি কিছুতেই বুঝছি না যে উনি সিনেমা মুক্তির জন্য কাকরাইলে পরিবেশকদের কাছে কেন যাননি? সেখানে তো নানারকম চুক্তিতে অনেক মানহীন সিনেমাও মুক্তি দেয়া হচ্ছে। সেদিক থেকে ‘গন্তব্য’ ভালো সিনেমা। এখানে তারকারা আছেন। এর গল্পটাও বেশ ভালো। আমার কাছে অনেক কিছুই খটকা লাগে আসলে।

‘গন্তব্য’ ছবির নায়ক ফেরদৌস সংবাদ মাধ্যমে আক্ষেপ করেছেন এ খবর পড়ে। তিনিও নাকি পরিচালকের ওপর ক্ষুব্ধ এমনটাই জানা গেছে। এদিকে জানা গেছে, তার ওপর ক্ষোভ আছে স্ত্রী এলিনা শাম্মিরও।

মূলত এলিনা শাম্মীকে নিয়েই সিনেমাটি প্রযোজনা করেন পলাশ। সেটা করতে গিয়ে তাদের ঋণ করতে হয়। ঋণ বাবদ প্রতি মাসে কিস্তি দিতে হতো এলিনা শাম্মিকে। কারণ অরণ্য পলাশ ছিলেন বেকার। যে কারণে বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচ বহন করতেন এলিনা।

এদিকে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতিতে সিনেমাটি নিজের নামে নিবন্ধন করান অরণ্য পলাশ। এটা জেনে ক্ষেপে যান এলিনা। তিনি নিবন্ধনে জোচ্চুরির অভিযোগ তুলে সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ান। তারপরই বিপাকে পড়েন অরণ্য পলাশ। কোনো রকমে সিনেমাটি শেষ করতে পারলেও সেটি মুক্তি দিতে পারছেন না। কোনো চাকরি না থাকায় বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে তাকে হোটেল বয়ের কাজ করতে হচ্ছে।

এলিনা শাম্মী ‘গন্তব্য’ ছবিতে টাকা লগ্নি করেছেন এ বিষয়টা স্বীকার করেছেন অরণ্য পলাশ নিজেও। তবে তিনি এটা মানতে চান না যে সিনেমা নিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। তার মতে, ‘সিনেমা নিয়ে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা দুজন মিলে টাকা দিয়েছি ছবির জন্য। আমাদের ঝামেলা ব্যক্তিগত। অনেক পরে আমি জানতে পারি যে এই সিনেমার প্রযোজক আসলে অন্য আরেকজন। এলিনা শাম্মি প্রযোজক হলেও আমার আপত্তি ছিল না।

আমি কি সিনেমার জন্য আমার বাবার পেনশনের টাকা দেইনি? জমি বিক্রি করিনি? আমার বাড়িতে গেলেই দেখতে পাবেন। তাহলে কেন আমি অন্যের প্রযোজনার বিষয়টি মানবো? এটা নিয়ে ঝামেলা রয়েছে।

সিমপ্যাথি দেখিয়ে আপনি সরকারি অনুদান পাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরে অরণ্য পলাশ বলেন, ‘আমি জানি না লোকে কেন আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে টানছে। আমি টাকা চাই না। সিনেমাটি মুক্তি দিতে চাই।’

‘গন্তব্য’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, আইরিন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কাজী রাজু, আফফান মিতুলসহ অনেকে। সিনেমাটির জন্য এসব শিল্পীও নামে মাত্র পারিশ্রমিক নিয়েছেন। বিশেষ করে নায়ক ফেরদৌস ছবিটির জন্য পারিশ্রমিক নেননি। তিনি এই ছবির জন্য স্পন্সর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।