পেঁয়াজের দাম তখন সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই করছিল। রড-সিমেন্টের একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে পাঁচ টন পেঁয়াজ জব্দ করেছিলেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। এখন সেই পেঁয়াজের দাম দেড়শ পেরিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অভিযান শেষে জানা গেল, শুধু রড-সিমেন্টের ডিলার নয়; বাড়তি দামের ফায়দা লুটতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন জুতার দোকানদারও!
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোডে নূপুর মার্কেটে অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগে দুজনকে আটক করে জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম জানান, খাতুনগঞ্জে গতকালের অভিযানে বেশকিছু ইনভয়েস এবং আমদানির ডকুমেন্ট পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে চট্টগ্রামের তিনজন আমদানিকারকের ঠিকানা পাওয়া গিয়েছিল। আজ সেসব ঠিকানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এক পেঁয়াজ আমদানিকারক নূপুর মার্কেটে যে ঠিকানা ব্যবহার করেছেন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সেটি একটি জুতার দোকান! এ ছাড়া এস কে ম্যানশনে আরও দুটি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে; তারা মূলত মিয়ানমার থেকে বার্মিজ পণ্যের আমদানিকারক।’
‘পরে দোকান তল্লাশি করে জানতে পেলাম, সম্প্রতি তারা নাকি পেঁয়াজও আমদানি করছে। এ ঘটনায় ম্যানেজার ও মালিকের ছেলেকে আটক করে ডিসি অফিস নিয়ে আসা হয়েছে। কারসাজির সঙ্গে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব অসাধু আমদানিকারক টেকনাফের একটি চক্রের সঙ্গে মিলে মিয়ানমারের পেঁয়াজের মূল্য আড়তদারদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ডকুমেন্ট অনুযায়ী গত ২ নভেম্বর কেনা পেঁয়াজ গতকাল মার্কেটে ঢুকেছে। আগের পেঁয়াজগুলো বেশি দামে বিক্রি না করতে পারলেও সম্প্রতি আসা পেঁয়াজগুলো খুব চড়া দামে বিক্রি করছে তারা।’
প্রসঙ্গত, আজ সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখান থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিয়েছে এস আলম গ্রুপ, ৯ হাজার টন আনছে মেঘনা গ্রুপ। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজের মৌসুমও শুরু হবে শিগগিরই। তাই সংকট থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে এখানেও যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে। তাই দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। দুই সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার মধ্যে নেমে আসবে।’
বৈঠকে অংশ নেয়া খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী জানান, আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হবে।