ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যে কারণে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায়


এক দেহ-এক প্রাণ’ চেতনায় বিশ্বাসী পুরো মুসলিম মিল্লাত। ইসলামের অপরিহার্য বিধান উপেক্ষা করার কারণেই মুসলিম মিল্লাত আজ বিভক্ত। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, নিন্দাবাদের ঘৃণ্য কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত মানবতা। ফলে মুসলিম বিশ্বে অশান্তির আগুন জ্বলছে। এ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার করা।

কুরআন-সুন্নায়ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদারের নির্দেশ এসেছে। আর তাহলো-

> শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামে ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১০)

> একত্মবাদে বিশ্বাসী মুমিনদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সেই সব লোকদের মতো হইও না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৫)

> অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নামাজ প্রতিষ্ঠা কর এবং কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত হইও না। যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩১-৩২)

> এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এক পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)

> যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকে তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার কথা এভাবে ওঠে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে বেশি ভালোবাসি যারা আল্লাহর রাস্তায় এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, ঠিক যেন শিষাঢালা এক সুদূঢ় প্রাচীর।’ (সুরা সফ : আয়াত ৬১)

> প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনগণ একজন মানুষের মতো, যার চোখ আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আক্রান্ত হয় আর মাথা আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আহত হয়।’ (মুসলিম)

> অন্য হাদিসে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপনে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত হারিছ আল আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে-

– সংঘবদ্ধ হওয়া,
– আমিরের নির্দেশ শোনা,
– আমিরের নির্দেশ মেনে চলা,
– হিজরত করা,
– অল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।

যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধতা ত্যাগ করে এক বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরে যায়, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে নেয়। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! নামাজ প্রতিষ্ঠা এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও?

উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নামাজ কায়েম এবং রোজা পালন ও মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও।’ (তিরমিজি)

> অন্য হাদিসে ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে-

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একটি অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে।’ (বুখারি)

সুতরাং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের বিকল্প নেই। মুমিন মুসলমান যখনই ঐক্যবদ্ধ জীবন থেকে সরে দাঁড়ায়, শয়তান সে স্থান দখল করে। তাই তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-যাপন কর, সংঘবদ্ধ থাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন যাপন কর না, কারণ বিচ্ছিন্ন হলে শয়তানের কুপ্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ)

তিনি আরও বলেছেন, ‘মুমিনগণ অপর মুমিনের জন্য একটি প্রাচীরের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলে প্রবেশ করান।’ (বুখারি)

মুমিন মুসলমানের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বহীন থাকা অকল্যাণকর। তা থেকে সতর্ক থাকতে হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিনজন লোকও যদি কোনো নির্জন প্রান্তরে থাকে। তবে একজনকে আমির বা দলনেতা সাব্যস্ত কর।’(মুসনাদে আহমাদ)

এ সবের উদ্দেশ্য একটাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করা। যার ফলে গড়ে উঠবে শান্তিপূর্ণ ইসলামি সমাজ।

মনে রাখতে হবে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত সেই বিখ্যাত হাদিসটি। যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু (নাউজুবিল্লাহ)। (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার তাওফিক দান করুন। জাহেলিয়াতের মৃত্যু থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালে শান্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *