মালয়েশিয়ায় প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে অভিবাসন নীতির। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াও এখন বেশ জটিল। অভিবাসন আইনের এ জটিলতার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশি।
গত আড়াই বছর ধরে চলতে থাকা সে-দেশের সরকারের লিগ্যালাইজেশনের সুযোগের পরও বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশের কর্মী বৈধতার নামে প্রতারিত হন। সেসব কর্মীর বৈধতা দিতে সবকটি দেশের দূতাবাস থেকে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
উল্টো চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি শুরু করে দেশটির সরকার। এর আওতায় নিরাশ হয়ে কেউ কেউ নিজ নিজ দেশে ফিরছেন। আবার কারও নানা জটিলতায় দেশে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে। এর মাঝে কেউ কেউ আশায় রয়েছেন যদি বৈধতার ঘোষণা আসে। শেষ চেষ্টায় রয়েছেন। এ আশা-নিরাশার দোলাচলে আছেন বাংলাদেশিরা।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়া ত্যাগ না করলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে অবৈধদের, এমন তথ্য জানা যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে ৫ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে অবস্থান করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকও করেন তিনি। শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে দু-দেশ একমত হলেও অবৈধদের বিষয়ে কোনো কিছুই হলো না। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী অবৈধদের বিষয়ে প্রস্তাব রাখলে সে দেশের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানালেন মন্ত্রী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বিগত সরকার তার দেশে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বৈধ হওয়ার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সেই হিসাবে সরকার মাই-ইজি, ভুক্তি মেঘা ও ইমান এ তিনটি ভেন্ডরাকে (ঠাকাদার) দায়িত্ব দিয়েছিল অবৈধ বিদেশি কর্মীদের নাম নিবন্ধন করতে।
সেসময় ভেন্ডার কোম্পানিগুলো কোন কোম্পানিতে কতজন শ্রমিক প্রয়োজন সেটা যাচাই-বাচাই না করে ঢালাওভাবে নিবন্ধন শুরু করে।
এ তিনটি ভেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিবন্ধিত হয়েছিলেন। নিবন্ধিতদের মধ্যে প্রায় তিন লাখের অধিক শ্রমিক ভিসা পেয়েছেন। তারপরও অনেকেই বৈধ হতে পারেননি। কারণ, কারও নাম জটিলতা, কারও বয়স জটিলতা। আবার কেউ কেউ স্থানীয় এজেন্ট ও দালালকে পাসপোর্ট ও রিঙ্গিত দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ায় বৈধ হতে পারেননি বলে শতশত অভিযোগ হাইকমিশনে জমা পড়ে।
দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতারিত এসব বাংলাদেশি কর্মীর জটিলতা নিরসন করে যাতে আবারও বৈধ করা হয়, সে বিসয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেন দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা।
প্রতারিত কর্মীরা বলছেন, ইচ্ছা করে কেউ অবৈধ হয়নি। দালালদের প্ররোচণায় পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে, আমরা অবৈধ হয়েছি। একদিকে পরিবারের রোজগার, অন্যদিকে ঋণগ্রস্ত-প্রতারিত। এখন বৈধতা না দিলে দেশে গিয়ে আমরা কী করব?
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও হাইকমিশনকে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও দেশটিতে অবৈধদের বসবাস ঠেকাতে বিভাগটি কাজ করছে। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদে কোনও পক্ষের সঙ্গে আপস করা হবে না।
গত দেড় বছরে ৭২ হাজার ৩৬১ জনকে পাসপোর্ট ও ভিসা জটিলতার কারণে অভিবাসন আইন ১৯৫৯/৬৩ এর ৮ (৩) ধারায় পাঁচ বছরের জন্য মালয়েশিয়ায় প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অবৈধ কর্মীদের কাজ দেয়ায় এবং বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১ হাজার ৩২৩ জন নিয়োগকর্তাকে আটক করা হয়।