প্রকৃত মুমিনের পরিচয় যেভাবে বর্ণিত হয়েছে কুরআনে


ঈমান মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আল্লাহর কাছে ঈমানবিহীন সব আমলই মূল্যহীন। সে কারণে মানুষের প্রথম কাজই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা।

তাইতো সাহাবায়ে কেরাম আগে ঈমান শিখেছেন তারপর কুরআন শিখেছেন। আর এ কারণেই তাদের ঈমান অন্যদের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ভাষায়-
‘আমরা ঈমান শিখেছি। এরপর কুরআন শিখেছি। ফলে আমাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ)

মানুষের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ বা আবশ্যক কাজ। মানুষ কীভাবে প্রকৃত মুমিন হবে সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন-
‘প্রকৃত মুমিন তারাই যখন তাদের কাছে আল্লাহর নাম নেয়া হয়, তখন তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের কাছে তাঁর (আল্লাহর কুরআনের) আয়াত পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। তারা তাদের প্রভুর ওপরই ভরসা করে। তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমার দেয়া রুজি হতে (আল্লাহর পথে) খরচ করে। তারাই হলো সত্যিকারের মুমিন। (সুরা আনফাল : আয়াত ২-৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃত মুমিন হতে এসব বিষয়ের প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেছেন। যে বিশ্বাস একজন মানুষকে প্রকৃত মুমিনে পরিণত করে দেবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি আল্লাহ তাআলা, তাঁর ফিরিশতাগণ, আসমানি কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, শেষ দিবসের প্রতি (আখিরাত) এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। (মুসলিম)

এ বিষয়গুলোর প্রতি প্রথমেই মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্তরে একান্ত বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং বাস্তবে অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে এ বিশ্বাসকে বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং অবাধ্যতায় হ্রাস পায়। সুতরাং যারাই ঈমান আনে তারা হয় মুমিন।

মানুষের ঈমান এমন এক শক্তিশালী জিনিস, যার প্রভাবে মানুষ দুনিয়ার সব অন্যায়-অপরাধ তথা সব ধরনের গোনাহের কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানদারের ঈমানি শক্তি বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন যে-
‘পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় ব্যাভিচারি (কোনো ব্যক্তি) ব্যাভিচারে লিপ্ত হতে পারে না। চোর পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় চুরি করতে পারে না। আর মদখোর পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় মদপান করতে সক্ষম হয় না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

অর্থাৎ মানুষ যখন ঈমানে শক্তিতে দুর্বল হয়ে যায়, তখনই কেবল গোনাহের দিকে ধাবিত হয়। সুতরাং ঈমানের শক্তিতে নিজেকে একনিষ্ঠ রাখতে মহান আল্লাহর সে ঘোষণার আমল নিজের মধ্যে জারি রাখা জরুরি। যা তিনি কোনো ঈমানদারকে উদ্দেশ্যে করে বলেননি বরং সব মানুষকে উদ্দেশ্য করে আহ্বান করেন-
হে লোকসব! তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদাত কর, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা আল্লাহভিরু হতে পার। যে পবিত্র সত্ত্বা (প্রভু) তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা, আকাশকে সামিয়ানা হিসেবে স্থাপন করেছে। আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণের মাধ্যমে তোমাদের খাদ্য হিসেবে (রিজিক হিসেবে) ফল-ফসল নির্গমন করেছেন । (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২১-২২)

মুমিনকে মনে রাখতে হবে
মহান আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমিনের একচ্ছত্র অধিপতি। তিনি মহান আরশের মালিক। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তিনি তাওবা গ্রহণকারী এবং ক্ষমাকারী। তিনিই ঈমানদার ও ঈমানহীন লোকের রিজিক দাতা। তিনিই পরম দয়ালু অসীম করুনার আধার। যার প্রতি ঈমান আনা বা বিশ্বাস স্থাপন করা মানুষের প্রধান কাজ।

আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে ঈমানের মহামূল্যবান সম্পদ লাভের তাওফিক দান করুন। ঈমান স্থাপনরে মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সব নেয়ামত ভোগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *