শেষ সময়ের একদিন পর শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) মন্দবাগ স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
আজ দুপুরে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামছুজ্জামানের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্ত দলের সদস্যরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেয়ার শেষ সময় থাকলেও কয়েকটি বিষয় অসম্পূর্ণ থাকায় তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একদিন সময় চেয়েছিলেন। আজ সে কাজ শেষ করে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন ডিজির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তদন্তের বিষয়ে রেলমন্ত্রী ঢাকায় ব্রিফ করবেন বলে জানান তিনি।
তবে তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সরাসরি জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পুরো বিষয়টি ব্রিফিংয়ে বলা হবে। তবে আমরা এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে যা দেখেছি, তাতে কোথাও তুর্ণা নিশীথার চালকদের ব্রেক করতে সমস্যা হওয়ার মতো কারণ দেখিনি। তারা যথেষ্ট সময় ও জায়গা পেয়েছিলেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, তুর্ণা নিশীথার চালকরা চাইলেই ফুল ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারতেন।’
নাসির উদ্দিন জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ ঘটনার সংশ্লিষ্ট মোট ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীর সাক্ষ্যও নেয়া হয়েছে। এসময় আমরা জানার চেষ্টা করেছি দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের স্পিড কত ছিল, সিগন্যালিং অবস্থা কেমন ছিল, চালকরা কী অবস্থায় ছিলেন-এইসব বিষয়। স্টেশন মাস্টারদের ব্যবহৃত কোডগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে বলেও জানান কমিটির আহ্বায়ক।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেটি হলো-“মন্দবাগ ট্রেন দুর্ঘটনায় চালকের ‘অবহেলা’ ছিল।”
তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে তূর্ণা নিশীথার ট্রেনচালক তাছের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে প্রথমে একে অপরের প্রতি দোষারোপ করলেও পরে ইটের স্তূপের জন্য সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ার কথা জানান। তবে তদন্ত কমিটির কাছে এর কোনোটাকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যথেষ্ট মনে হয়নি।
তারা জানিয়েছেন, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে সব জায়গায় নির্মাণ কাজের মালামাল আছে। সর্বোচ্চ সিকিউরিটি বজায় রেখে এ কাজের মালামালগুলো রাখা হয়েছে। তাই ‘ইটের স্তূপের কারণে’ সিগন্যাল না দেখার মতো ঘটনা ঘটার কথা নয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, সিগন্যাল না দেখার মতো কোনো ঘটনা থাকলে ইমার্জেন্সি ভেঁপু বাজানোর সিস্টেম আছে, যা বাজাবেন তূর্ণা নিশীথার চালকরাই। কিন্তু তারা এমন কিছুও করেননি।
তদন্ত কমিটির কাছে দুর্ঘটনা এড়াতে চালকের ‘অবহেলা’ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ হিসেবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো লোকোমাস্টার (চালক) যখন ব্রেক অ্যাপ্লাই করেন, তখন ৪৪০ গজ গিয়ে ট্রেনটা থেমে যায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত তূর্ণা নিশীথার চালকরা এ ক্ষেত্রে বেশি জায়গা নিয়েছিলেন।
গত সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে কসবার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে (বহিঃঅংশে) চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। উদয়নের মাঝামাঝি তিনটি বগিতে সজোরে ঢুকে যায় তূর্ণা নিশীথা। এতে ১৬ জন যাত্রী নিহত এবং শতাধিক যাত্রী আহত হন। এ ঘটনায় রেল মন্ত্রণালয়, রেল ভবন ও বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয় চারটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের একটিসহ মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।