মুসলিম স্থাপনা সমৃদ্ধ দেশ ভারত। পর্যটন খাতে মুসলিম স্থাপনা থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেশটি। বিভিন্ন সময়ে মুসলিম রাজা বাদশাহরা এ সব স্থাপনা নির্মাণ করেছে। আর এসব স্থাপনা দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমায় ভারতে।
সম্প্রতি উগ্র হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন মুসলিম স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধপরিকর। যার ফলশ্রুতিতে ৪০০ বছরেরও পুরনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। আরও ৩২ হাজার মুসলিম স্থাপনা ভেঙে সেখানে মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
অথচ ভারত তাদের পর্যটন খাতের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায় মুসলিম স্থাপনাগুলো থেকে। দেশটির অফিসিয়াল হিসেবে দেখা যায়, প্রথম সারির রাজস্ব উৎপাদনকারী প্রাচীন নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম ৫টি হলো মুসলিম শাসকদের হাতে নির্মিত স্থাপনা। আর সেগুলো হলো-
> আগ্রার দুর্গ
> কুতুব মিনার
> তাজমহল
> লালকেল্লা
> ফতেহপুর সিকরি।
মোঘল সম্রাটদের দ্বারা তৈরি আগ্রার দুর্গ। বাদশাহ আকবরের রাজত্বকালে এ দুর্গ তৈরির কাজ শুরু হয়। সময়ের তালে তালে এ দুর্গে অবস্থান করেন অনেক মোঘল বাদশাহ। যা আজো বাদশাহদের সাক্ষ্য বহন করে আছে।
ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত সুউচ্চ স্তম্ভ হলো কুতুব মিনার। এটি ভারতের প্রথম মুসলিম শাসক সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবেকের আমলে তারই নির্দেশে নির্মাণ করা হয়। ১১ ৯৩ খ্রিস্টাব্দে কাজ শুরু হলেও তা ১৩৮৬ সালে ফিরোজশাহ তুগলকের আমলে শেষ হয়। মিনারটির উচ্চতা ২৩৮ ফুট। মিনারটির পাদদেশের বেড় ৪৭ ফুট।
ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধিসৌধ হলো তাজমহল। মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু’র স্মৃতির উদ্দেশ্যে এ মহল তৈরি করেন। আরজুমান্দ বানু মমতাজ নামে বেশ পরিচিত ছিলেন। তার নামানুসারেই এ স্থাপনাকে তাজমহল বলা হয়।
১৬৩২ সালে এ স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। ১৬৪৮ সালে মূল সমাধির কাজ শেষ হলেও চারদিকের কাজ ইমারত নির্মাণ কাজ ১৬৬৩ সালে শেষ হয়।
তাজমহলের সৌন্দর্য অবলোকনে সারাবিশ্ব থেকে মানুষ আগ্রায় আসে। আর তাতে ভারত সরকার এ তাজমহল থেকেই অনেক রাজস্ব পেয়ে থাকে।
১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত প্রাচীর বেষ্টিত দুর্গ লালকেল্লা নামে পরিচিত। এটিও মোঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত একটি দুর্গ। ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত এ দুর্গটি ছিল মোঘল সম্রাটদের রাজধানী। কিলা-ই-মুবারক’ বা ‘আশীর্বাদ ধন্য দুর্গ’ হিসেবে এটি পরিচিত ছিল। কারণ এ দুর্গেই সম্রাটের পরিবারবর্গ বসবাস করতেন।ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলায় ফতেহপুর সিকরি অবস্থিত। ১৫৬৯ সম্রাট আকবরের ছেলে বাদশাহ জাহাঙ্গীর এ ফতেহপুর সিকরিতে জন্ম নেয়। ১৫৭১-১৫৮৫ পর্যন্ত মোঘল সম্রাজ্যের রাজধানী ছিল ফতেহপুর সিকরি। ১৫৭৩ সালে এ দুর্গটির নাম হয় ফতেহপুর সিকরি।
উল্লেখ্য যে, ভারতের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এই পাঁচটি প্রাচীন নিদর্শন থেকে ভারত সরকারের আয় হয়েছে ১৪৬.০৫ কোটি রুপি, যা ভারতের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত প্রাচীন নিদর্শনাবলীর মোট আয়ের (২৭১.৮ কোটি) অর্ধেকের চেয়েও বেশি।
শুধু তাজমহল থেকেই আয় হয় ৫৬.৮৩ কোটি রুপি। বছরটিতে ৬৪.৫৮ লাখ দেশী-বিদেশী দর্শনার্থী এ স্থাপনাটি ঘুরে দেখেন।
আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে আগ্রার দূর্গ। যার বার্ষিক আয় ৩০.৫৫ কোটি রুপি। এ দুর্গ দেখতে দেশি দর্শনার্থীদের ৩০ রুপি পরিশোধ করতে হয় আর বিদেশিদের পরিশোধ করতে হয় ৫০০ রুপি।
এতো আয়ের পরও ভারতের অনেক রাজনীতিকদের মাঝে চলে ব্যাপক বিতর্ক। তাদের ভাষায় মুসলিম শাসকদের আমলে নির্মিত এসব স্থাপনা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেন । যে কারণে ইউপি ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট তাদের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রের তালিকা থেকে তাজমহলকে বাদ দেয়।