যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বেভারলিহিলস শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকানদের ক্রীড়া সংগঠন মিশিগান বেঙ্গলসের ব্যতিক্রমী বার্ষিক অনুষ্ঠান। গত রোববার (১৮নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় শহরের গ্রোভ হাই স্কুল মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ছিল বাৎসরিক নৈশভোজ, গালানাইট ও অ্যাওয়ার্ড বিতরণ। জমকালো এ অনুষ্ঠানে মিশিগান, ওহাইওরাজ্য ও কানাডা থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন ডঃ সিতারা বেগম এবং ডঃ এম আবিদুর রহমানকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন মিশিগান বেঙ্গলস। ১৯৭৫ সালে ভাই মেজর হায়দার নিহত হলে ডা. সিতারা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধা দম্পতিকে লাল সবুজ উত্তরীয় পড়িয়ে দেয় এলিশা ভূইয়াও রায়া সিরাজ। এছাড়া ডা. সিতারা সম্মাননা স্মারক ক্রেস্টতুলে দেন সাইদ ফয়সাল ও রসি মীর। এরপর ডঃ সিতারা বেগমের সাহসিকতার উপর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে শ্রেয়া হাসান। ডঃ আবিদুর রাহমান ও ডঃ সিতারা বেগম সকলের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, এ সময় দর্শক সারির অনেকেই চোখ মুচ্ছিলেন।
এ বছর মিশিগান বেঙ্গল সক্লাব প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, দাবা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। এতে কয়েক শ বাংলাদেশি অংশ নেন। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকান শিশুদের জন্য তিন মাস ব্যাপী ফুটবল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালের ক্লাবের সফল খেলোয়াড়দের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন মিশিগান বেঙ্গলসের নেতৃবৃন্দ, মিডিয়াকর্মী, স্পনসর ও কমিউনিটির নেতারা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসক ও কমিউনিটি নেতা ড. দেবাশীষ মৃধা।অনুষ্ঠানে ডঃ মৃধাকে ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ও সমাজ সেবক হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। সকল আয়োজনে নেতৃত্বের জন্য ক্লাবের ক্লাবের পক্ষ থেকে রসি মীর কে সেরা সংগঠকের পুরষ্কার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মিশিগান বেঙ্গলসের কার্যকরী কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন উপদেষ্টা সাইদ ফয়সাল। অন্যান্য উপদেস্টারা হলেন গোলাম মোস্তফা, মাহবুব চৌধুরী, ফরিদ চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহিন ইসলাম ও আবেদুর রাসুল। কার্যকরী কমিটির সদস্যরা হলেন সাইফ সিদ্দিকী, কৌশিক আহমেদ, মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আজিজ, মারুফ মনওয়ার ও রসি মীর।
পুরস্কার বিতরণের পাশাপাশি নাচ-গানে জমজমাট ছিল অনুষ্ঠান। আলোক ছড়ার আলো জেলে উঠে মঞ্চেছে,এতে নৃত্য পরিবেশন করে ছোট বন্ধুম ঞ্জুরি, শায়রিন, তাজরী, রিদিতা, শ্রেয়া, রায়া, এলিশা ও রায়া। গান পরিবেশন করে শিশু শিল্পী অমিতা মৃধা, নাশিতা আজিজ ও জারা আনোয়ার।
শচিন দেব বর্মণের গান ঝিল মিল ঝিল গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন এমি ইসলাম, সুমাইয়া শাম্মা, শারমিন তানিম ও সানজিদা বন্যা। এছাড়া অন্য এক দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ফারজানা সানিয়া, সহেলী ও নাফিসা। এ ছাড়া, জনপ্রিয় গানের সঙ্গেনৃত্য পরিবেশন করেন রসি-শারমিন জুটি।
শাফকাত রহমান আবিরের দুটি গান পরিবেশন করেন জেমসের ‘মা’ ও মাহিনের ঘোড়া গুলির ‘পৃথিবীটা নাকি?’ । পাশা পাশি তৃনা বড়ুয়ার লালন ব্যান্ড এর গান ‘গুরুর চরণ’ শিমুল ইউসুফ এর সাহনাজ রহমতুল্লাহর জনপ্রিয় গান‘সাগরের তীর থেকে’ সকল অতিথিদের মুগ্ধকরে। এছাড়া দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করেন মোহাম্মদ নাজমুল আনোয়ার- এনী জুটি ও জাফরি – নিতু জুটি। অনুষ্ঠানে অতিথি শিল্পী ছিলেন আরশিত, প্রিয়া ও অরবিন্দ। তাদের গলায় জনপ্রিয় কিছু গান দর্শকদের মন জয় করে।
ইংরেজি জনপ্রিয় গান শেপ অফ ইউ এর ক্লাসিক্যাল মিউজিকের সাথে ব্যাতিক্রমি এক নাচ উপহার দেন ছোট বন্ধু রিহান, আতিফ, আরিয়ান, শাম্মা, শারমিন, বন্যা ও এমি, কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন এমি ইসলাম। বিয়াইন সাব গানের সাথে নৃত্য নিয়ে আসেন রসি, মারুফ, সাফী, রাদিয়া, শারমিন ও পুলক। মিশিগান বেঙ্গলসের ২০১৯সালের কার্যক্রম নিয়ে আবির হাসানের নির্মিত ডকুমেন্টারি সকলকে মুগ্ধ করে।
তিনি বলেন, মিশিগানে বাংলাদেশি কমিউনিটির এ আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। বিভিন্ন পেশা ও বয়সের বাংলাদেশিদের একত্র করার জন্য তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ দেন। সেই সঙ্গে খেলাধুলার জনপ্রিয় তাকা জেলা গিয়ে কমিউনিটি একত্র করার কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।
উপস্থাপনায় ছিলেন পপি দাস ও উবেদা সাহিরা সাউদা পরিচালনায় ছিলেন রসি মীর, কৌশিক আহমেদ ও সাইফ সিদ্দিকী। ক্যামেরায় ছিলেন রুবু রহমান।
ক্রিকেটে বেঙ্গল স্পারটান্স চ্যাম্পিয়ন হয় ও মিশিগান বেঙ্গল হিরো সহয় রানার আপ। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন সামী শোক রানা,সেরা ব্যাটসম্যান তারেক খান ও সেরা বোলার হন সামী শোক রানা। ভলিবল টুর্নামেন্টে মিশিগান বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স চ্যাম্পিয়ন ও ব্লক এন্ড রোল রানার আপ পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন ডঃ সাইদ আশরাফ, রানার আপ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আজিজ, সেকেন্ড রানার আপ এহতেশাম রাব্বি। টেবিল টেনিসে এককে চ্যাম্পিয়ন মারুফ মনওয়ার, রানার আপ মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, দ্বৈত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন সালাহুদ্দিন আজিজ ও মারুফ মনওয়ার, রানার আপ শাহিন ইসলাম ও আলমগীর হোসাইন। ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন কৌশিক আহমেদ ও মারুফ মনওয়ার ও রানার আপ হন সাইদ আশরাফ ও আলমগীর হোসাইন। পুরস্কার বিতরনি ও মঞ্চে সহযোগিতা করেন কৌশিক, রসি, পুলক, মারুফ ফিরোজ, মাহবু্ব ও সাইদ আশরাফ।
অতিথি অভ্যর্থনায় ছিলেন ছোট্ট বন্ধু শারার, রাফিম, আতিফ, আয়ান,আরিয়ান, রিহান ও মাহমুদুল খান আপেল।
অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল মৃধা ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া, এইপুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের স্পনসর করেছেন জেনারেল মটরস এশিয়ান কানেকশন, এ আরজি গ্রুপ,এলিমেন্টারি ল্যান্ডিং, বেঙ্গলস আটো সেলস, এসসি রিয়েল এস্টেট, হোম সোর্স রিয়েলেটি ও অয়ারেন ফার্মেসি। অনুষ্ঠানের মিডীয়া পার্টনার সিনে বাকশো।