বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। এ সম্ভাবনাময় বাজারটি নিয়ে চলছে ক্যাসিনো খেলা। দু’দেশের সরকার বাজার খোলার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও ক্যাসিনো (সিন্ডিকেট) রাজারা তাদের প্রজাদের নিয়ে বাজারটি বন্ধ রাখতে নষ্টালজিয়ায় মেতে উঠেছে। বলা চলে এদের সঙ্গে দু’দেশের সরকার পেরে উঠতে পারছে না বলে অনেকেই বলছেন।
এ শ্রমবাজারকে চাঙা রাখতে হলে ইমেজ বৃদ্ধির দ্বিতীয় বিকল্প নেই। কিন্তু সিন্ডিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সম্প্রতি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কালোমেঘ বাড়ছে। এদিকে দেশটির শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে চলতি মাসের ২৪ ও ২৫ তারিখ ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে স্থগিত হলো সেই বৈঠকটি।
১৮ নভেম্বর মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, আপাতত বাংলাদেশে আসছে না তাদের প্রতিনিধি দল। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে কি কারণে বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছে তা জানায়নি মালয়েশিয়া।
এর আগে ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং সে দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগানের মধ্যকার অনুষ্ঠিত হওয়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শ্রমবাজারটি চালুর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সেই বৈঠকে শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে একমত হয় উভয় দেশ। এর অংশ হিসেবে চলতি মাসের ২৪ ও ২৫ তারিখে ঢাকায় আসার কথা ছিল মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধি দলের। যেখানে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ থেকে কত তারিখ হতে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের কোন কোন এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে।
কিন্তু চলতি মাসের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বৈঠকটি হঠাৎ করে স্থগিত হওয়ায় আবারো ঝুঁলে যাচ্ছে বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু হওয়ার বিষয়টি। এ বিষয়ে বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলছেন, যথা শিগগিরই পুনরায় বৈঠকের দিন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আলোচনার মধ্যদিয়ে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবে বলে জানান তিনি।
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায় কর্মী পাঠানোর অনলাইন পদ্ধতি এসপিপিএ। এরপর সে সময়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বি.এসসি ২৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় বৈঠক করেও, শ্রমবাজারটি চালু করতে পারেননি। এরপর ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সেই বৈঠকে নতুন করে কর্মী নেয়ার কিছু পদ্ধতি ঠিক হয়। চলতি বছরের ১৪ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী (তখন প্রতিমন্ত্রী) ইমরান আহমদ মালয়েশিয়া সফরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ও মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারানের সাথে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের অগ্রগতি হিসেবে ২৯ ও ৩০ মে মালয়েশিয়ায় দু’দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের আরেকটি বৈঠক হয়।
বরাবরই মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মার্কেট। অথচ এখন বাজারটি ইমেজ সংকটের চেইনে আটকে আছে। ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে লোভনীয় এই শ্রমবাজার। সম্ভাবনাময় এই বাজার থেকে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সাধারণ পরিবারের তরুণদের কাছে এক নব প্রেরণার আলো মালয়েশিয়া। এসব পরিবারের কর্মহীন, বেকার শিক্ষিত অনেক তরুণদের স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া। কোনোমতে যেতে পারলে ভাগ্য বদলাবে, ঘুচবে বেকারত্ব, আসবে পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, ফিরবে প্রাণ এমনই মনে করছেন তারা।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ওখানকার শ্রমবাজারের হাল হকিকত। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করছেন ঠিকই। কিন্তু নানা কারণে আবার শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত হচ্ছে না। অনেকে বলছেন, দেশটিতে অবৈধ রয়েছেন, প্রতারণার শিকার হয়ে তারা বৈধ হতে পারেননি। তাদেরকে বৈধ করার জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বিগত মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিতে তিনটি ভেন্ডর কোম্পানির মাধ্যমে চালু করেছিল রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ বৈধ হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। এ প্রোগ্রামে নাম ও বয়স জটিলতা এবং প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বৈধ হতে পারেননি।
এ ছাড়া প্রায় ৭০ হাজারের মতো ইমিগ্রেশনের লেভি পরিশোধ করে দেড় বছরেও বৈধতা পাননি। আর যারা বৈধতা পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই নিজের কোম্পানিতে কাজ না করে অন্যত্র কাজ করছেন। প্রতিনিয়তই মালয়েশিয়ায় অব্যাহত রয়েছে ইমিগ্রেশনের অভিযান। বৈধ অবৈধ ধরা পড়ছেন অভিযানে। কারণ যারা বৈধ কোম্পানি ছেড়ে অন্যত্র কাজ করায় আটক হচ্ছেন। এটা দেশটির আইনত অপরাধ বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিউনিটির অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর প্রয়োজন। সিন্ডিকেটমুক্ত ও কম খরচে কর্মী প্রেরণে বাংলাদেশের বিশাল লোভনীয় এই বাজারের ব্যাপকতা বাড়াবে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।