প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে ঝরলো দেড় লক্ষাধিক শিশু


পরশু শেষ হয়েছে প্রাথমিক ও ইবদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো অভিযোগই উঠেনি। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে ৬টি বিষয়ের পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছে ১১৭ জন। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৬ জন এবং ইবতেদায়িতে ৯১ জন।

প্রাথমিকের গণিত ও ইংরেজী পরীক্ষায় কোনো বহিষ্কার নেই। তবে, ইবতেদায়িতে ইংরেজী ও গণিতে যথাক্রমে বহিষ্কার হয়েছে ১১ জন ৫০ জন। প্রাথমিকের এ তথ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ গণিত ও ইংরেজী নিয়েই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি বেশি। এ ভীতি শুধু প্রাথমিকেই নয়, উচ্চ শিক্ষাতেও বিরাজ করছে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে।

কিন্তু দু’দিনের (গণিত ও ইংরেজী) পরীক্ষায় কোনো পরীক্ষার্থী নকলের অভিযোগে বহিষ্কার না হওয়ার তথ্যকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে অভিযোগ করেছেন পরীক্ষা মনিটরিং করা সংস্থা বা ব্যক্তিরা। তারা বলেন, এটি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর মধ্যে কোনো ধরনের শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে।

এবারের প্রাথমিকে পরীক্ষায় বহিষ্কার হয়েছে, ২৬ জন। এরা সবাই ভুয়া পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকেও জানানো হয়েছে। তারা ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল না। তাদের প্রায় সবাই এবারের জেএসসিতে অংশ নিয়েছিল। তারা অন্যের নামে পরীক্ষা দিতে এসেছিল।

তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তারা কম বয়সী। তারা স্ব-প্রণোদিত হয়ে পরীক্ষা দিতে আসেনি। তাদের পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য করেছে, কিছু অসাধু শিক্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, বেসরকারি সাহায্য সংস্থা পরিচালিত স্কুলের শিক্ষার্থী এরা। এদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয়া হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে।

সমাপনী শুরুর বছর থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযাগ উঠেছে। এজন্য তদন্ত কমিটিও করতে হয়েছে। কিন্তু তাও আটকানো যায়নি। এবার (২০১৮ সালের সমাপনীতে) প্রশ্ন ফাঁস হয়নি বলে এক প্রকার বাহ-বাই নিচ্ছে মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ার কারণ হচ্ছে, সমাপনী পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) বাদ দেয়া হয়েছে গত বছর থেকে।

প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে মূলত এমসিকিউর জন্য। গত বছর থেকে এমসিকিউ বাদ দেয়ায় পরীক্ষার্থীদের বৃত্ত ভরাট বা টিক চিহ্ন দেয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতে ১০০ নম্বর করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। ফলে ছোট্ট মনিদের লেখার চাপ বেড়েছে।

পরীক্ষার শেষদিনে প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে অনুপস্থিত ছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৪ জন পরীক্ষার্থী। এরা সবাই সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে যে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনীতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৮৭ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯২ জন এবং ইবতেদায়িতে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৫ জন।

গত ১৭ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলা সমাপনী পরীক্ষায় উপস্থিত ছিল প্রাথমিকে ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫২ জন। ইবতেদায়িতে উপস্থিত ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪ জন। প্রাথমিকে অনুপস্থিত ছিল বা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ১ লাখ ৬৪৩ জন। আর ইবতেদায়িতে অনুপস্থিত ছিল ৪৮ হাজার ২৬১ জন। দুই ধারায় মোট অনুপস্থিত হচ্ছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৪ জন।

এ সংখ্যাটিই ঝরে পড়েছে বলে মনে করছেন প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্তরা। প্রাথমিক স্তরেই প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়াকে আশংকাজনক ও হতাশার বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

পরীক্ষায় এরা কেন অংশগ্রহণ থেকে বিরত রইল তার কোনো ব্যাখ্যা বা জবাব নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা দেশের প্রাাথমিক শিক্ষার নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনাকারী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই)।

তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার পরীক্ষার আগ মুহূর্তে দেশব্যাপী প্রবল ঘুর্ণিঝড় বুলবুলির প্রভাবে দেশে তিন বিভাগের ১৭ জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছিল। এ প্রাকৃতিক বিপর্যয় কারণে শিক্ষার্থী কমেছে। এ কারণে সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল ও জুনিয়র দাখিল পরীক্ষাই (জেএসসি/জেডিসি) হুমকির মুখে ছিল।

মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, দারিদ্র্যতাই মূল কারণ বলে মনে করা হয়। কিন্তু সরকারের এত উদ্যোগের পরও এত বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি বা ঝরে পড়ে, যাই বলি না কেন, হতাশাজনক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *