রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা কাজ ও সম্মতিই হাদিস। হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করাই উত্তম। কিন্তু হাদিসের ওপর যথাযথ জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কথায় কথায় হাদিসের বর্ণনা দিতে থাকে। এভাবে কথায় কথায় হাদিসের বর্ণনা দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা একান্ত আবশ্যক। কেননা যদি হাদিস বলে উল্লেখ করা তথ্যটি প্রকৃত হাদিস না হয় তবে তা মারাত্মক অপরাধ।
সেক্ষেত্রে এটি হবে হাদিসের নামে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর মিথ্যারোপ করা। আর হাদিসের নামে মিথ্যারোপ করার শাস্তি মারাত্মক ভয়াবহ। এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি-
>> হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার ওপর মিথ্যারোপ কর না। কারণ আমার ওপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
>> হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এ কথাটি তোমাদের কাছে বহু হাদিস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামকে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি, মুসলিম)
হাদিস বর্ণনাকারী উল্লেখিত দুজন সাহাবিই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশি সময় ধরে সঙ্গ দিয়েছেন। এমনকি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুখে-দুঃখে এবং খেদমতেও নিয়োজিত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর মিথ্যারোপ করা প্রসঙ্গে অন্য বর্ণনায় এসেছে-
>> হজরত মুগিরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘আমার ওপর মিথ্যারোপ করা আর অন্য কারো প্রতি মিথ্যারোপ করা এক নয় বা সমান নয়। যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নিলো।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং কথায় কথায় জানাশোনা ছাড়া কোনো ঘটনায় হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া ঠিক নয়। কেননা হাদিসের তথ্য দিয়ে বলা কথা যদি সত্য না হয় তবে ওই ব্যক্তি হবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর মিথ্যারোপকারী। আর মিথ্যারোপকারীর স্থান হলো সরাসরি জাহান্নাম। (নাউজুবিল্লাহ)
এ কারণেই উম্মতে মুহাম্মাদির সতর্কতার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
‘যা শুনে তা বলে বেড়ানোই কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদীর হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’
সুতরাং হাদিসের রেফারেন্স বা উদ্ধৃতি দেয়ার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে জেনেশুনে সঠিক হাদিসের বর্ণনা দেয়া। কোনো বিষয় সুস্পষ্টভাবে জানা না থাকলে জেনে নিয়ে তারপর অন্যকে জানানো বা নিজের আমল করা জরুরি।
উল্লেখ্য যে, ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস হাদিস। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জবানের বাণী। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে মুনাফিক ও ইসলাম বিদ্বেষীগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার বিকৃতি করে আসছে।
নিজেদের কথাকে হাদিস বলে চালিয়ে সমাজে ফিতনা ও ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে। যার ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সে কারণেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ করার অত্যান্ত মারাত্মক শাস্তি জাহান্নামি হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
মুসলিম উম্মাহর উচিত, হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের নামে মিথ্যা বা বানোয়াট কথা বর্ণনা করা থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।