উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত কিছু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আংশিক ছাড় দিতে গতকাল ৩১ ডিসেম্বর অর্থাৎ বছরের শেষ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে সময় বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা না করায় পারমাণবিক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ফের শুরুর হুমকি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন বছরের শুরুতেই পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার ওপর স্বঘোষিত নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র তথা গোটা বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের এই হুমকি দিয়ে কিম জং উন বলেছেন, ‘বিশ্ব খুব শিগগিরই এক নতুন ধরনের কৌশলগত অস্ত্র দেখতে পাবে।’
কিম বলেছেন, ‘স্বঘোষিত নিষেধাজ্ঞা মানতে আর বাধ্য নয় উত্তর কোরিয়া। শিগগিরই আবার এ ধরনের পরীক্ষা চলবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে আর নিষেধাজ্ঞাও জোরদার করছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের একতরফাভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কোনো যুক্তি নেই।’
গত বছরের প্রথম দিকে কিম-ট্রাম্প পারমাণবিক আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর একের যুক্তরাষ্ট্রকে সময়সীমা বেধে দিয়ে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর আবার এই মরণাস্ত্রের হুমকি আসলো এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে। বিশ্লেষকরা কিমের বক্তব্যকে বিপদজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হুমকি দিলেও উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পথও খোলা রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের ওপর।’ প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে কিম স্বপ্রণোদিত হয়ে একতরফাভাবে পারমাণবিক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিমের এমন ঘোষণার পর দুবছর পার হয়ে গেছে। আর এই সময়ে কথামতো উত্তর কোরিয়া দূর-পাল্লার আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। ট্রাম্প-কিম এবং পিয়ংইয়ং-ওয়াশিয়টন কূটনৈতিক আলোচনা চলাকালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা দেখে কিম জং উন নিজেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ রাখার ওই ঘোষণা দেন।
চিরবৈরী দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনা শুরুর পর কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনার পারদ কিছুটা কমেছিল। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প-কিম। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, কিমের এই হুঁশিয়ারিতে ফের সেই উত্তেজনা বাড়তে শুরু করবে।
ট্রাম্প তিনবার বৈঠক করেছেন কিমের সঙ্গে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় সংযত থাকার পদক্ষেপকেও বড় ধরনের কূটনৈতিক অর্জন বলে ট্রাম্প একাধিবার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়া পুরোপুরি পারমাণবিক কর্মসূচি বাদ না দেয়া পর্যন্ত তিনি দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি হননি।