কৃ‌ষি‌তে লাভ নেই, তাই কৃষক বর্গা চাষ ক‌রে না : কৃষিমন্ত্রী


কৃ‌ষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ব‌লে‌ছেন, ‘কৃ‌ষি শুধু উৎপাদন কর‌লেই চল‌বে না। কৃ‌ষি‌কে বা‌ণি‌জ্যিকীকরণ কর‌তে হ‌বে। কৃ‌ষি পণ্য বি‌দে‌শের বাজা‌রে পাঠা‌তে হ‌বে। মানুষ এখন আর বর্গা জ‌মি চাষ ক‌রে না। কারণ বর্গা জ‌মি চাষ কর‌লে কৃষ‌কের লাভ হয় না। তাহ‌লে কৃষক কেন চাষ কর‌বেন? কী কর‌লে কৃ‌ষি‌কে লাভজনক করা যা‌বে সে পথ খুঁজে বের কর‌তে করতে হবে।’

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ‘পু‌ষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য ‌নিরাপদ সব‌জি’ শীর্ষক এক সে‌মিনা‌রে প্রধান অতিথির বক্ত‌ব্যে তি‌নি এসব কথা ব‌লেন। এর ‌আগে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে তিন‌ দিনব্যাপী জাতীয় সব‌জি মেলা-২০২০ এর উদ্বোধন করেন তিনি।

কৃ‌ষিমন্ত্রী ব‌লেন, ‘আগে যারা বর্গা জ‌মি চাষ কর‌ত তারা এখন রিকশা ভ্যান চালায়। এ পেশায় থে‌কে তারা বাসায় টি‌ভি ফ্রিজ কি‌নে‌ছে। এখন য‌দি তারা চাষ কর‌তে যায় তাহ‌লে টি‌ভি ফ্রিজ বি‌ক্রি ক‌রে সার কি‌নে ফসল ফলা‌তে হয়। কিন্তু কৃষক সে ফস‌লের দাম পায় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কৃ‌ষি সেক্ট‌রে যারা আছেন তারা ভা‌বেন কী কর‌লে একজন মানুষ কৃ‌ষি‌তে ফি‌রে আস‌বে। কৃ‌ষি‌কে বহুমুখীকরণ কর‌তে কী কী কর‌তে হ‌বে তা করুন। আমা‌দের কৃ‌ষি পণ্য কীভা‌বে আন্তর্জাতিক বাজা‌রে পৌঁছা‌নো যায় সে ব্যবস্থা করুন।’

রাজ্জাক ব‌লেন, বাংলা‌দে‌শে ৮০ সাল থে‌কে মাশরুম চাষ হ‌চ্ছে। কিন্তু এ মাশরুম চাষ বৃ‌দ্ধি পা‌চ্ছে না। এত সুন্দর, পু‌ষ্টিগু‌ণে এবং ওষধিগুণে ভরপুর সে সব‌জির চাষ বাড়‌ছে না। এটা কেন বাড়‌ছে না। যে দে‌শে ৫০ বছ‌রের মানু‌ষের ৫০ ভাগ ডায়‌বে‌টিস রোগী সেই দে‌শে মাশরু‌মের চাষ বাড়‌বে না তা হ‌তে পা‌রে না। মাশরু‌মের প্রচারণা নেই। মানুষ জান‌তে পা‌রে না এর গুণাগুণ। কীভা‌বে মাশরুম চাষ বাড়া‌বেন সে জন্য কর্মসূ‌চি গ্রহণ ক‌রেন। সরকার আপনা‌দের সা‌পোর্ট দে‌বে।’

এর আগে মেলা উদ্বোধনের পর সাংবা‌দিক‌দের এক প্র‌শ্নের জবা‌বে ব‌লেন, ‘পেঁয়াজ চাষে উৎসাহী ও ভালো দাম পেতে সিজনের সময় যাতে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করা না হয় সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে। পেঁয়াজের জন্য আমরা শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। যখন মৌসুম আসে তখন পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক কমে যায়। সে কারণে মানুষ পেঁয়াজ চাষ করতে চায় না। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রীকে বলেছি- মৌসুমে কোনো পেঁয়াজ যেন আমদানি করা না হয়। চাষিরা যাতে ভালো দাম পায়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। আমরা ধান, চাল ও আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের ৩০-৪০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থেকে যায়। আমাদের কৃষিকে যদি লাভজনক করতে হয় এটাকে বহুমুখীকরণ করতে হবে। অন্যান্য অপ্রচলিত ফসলগুলোও উৎপাদন করতে হবে।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সবজি নিরাপদ হতে একটু সময় লাগবে। ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হচ্ছে। এটাকে লাভজনক করতে কাজ চলছে। আমি মনে করি, আমাদের যে প্রযুক্তি রয়েছে সেটাকে যদি ব্যবহার করতে পারি তাহলে দেশের চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারেও সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।’

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রা‌খেন- কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান।