মেজর পরিচয়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে কিশোরীকে বিয়ে


পাবনায় সাঁথিয়া উপজেলার দাড়ামোধা ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রাম থেকে মাহামুদ হাসান বাবু (৫২) নামে এক ভুয়া মেজরকে আটক করেছে র‍্যাব-১২। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিয়ের আসর থেকে তাকে আটক করা হয়।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব জানায়, সাঁথিয়া উপজেলার দাড়ামোধা ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রামের ওই কিশোরীর ইচ্ছা ছিল সৈনিক পদে চাকরি করার। সে রাজশাহীতে সৈনিক পদে পরপর দুবার বাছাইপর্বে দাঁড়িয়েও অকৃতকার্য হয়। পরে গ্রামের নজরুল ইসলামের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় ভুয়া মেজর মাহমুদ হাসানের সঙ্গে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই পরিবারের কাছ থেকে এরই মধ্যে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক মাহমুদ হাসান।

র‍্যাব ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, মাহমুদ হাসান আসলে একজন বই বিক্রেতা। তার বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার সুলতানবাদ গ্রামে। তিন সন্তানের জনক এই প্রতারক জীবিত স্ত্রীকে মৃত বলে ওই পরিবারে ঢুকে পড়েন। সরল বিশ্বাসে চাকরি আর অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখ ওই কিশোরীকে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিয়েও করেন মাহমুদ হাসান।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী বলে, ‘আমি চাকরির জন্য দুবার রাজশাহীতে সৈনিক পদে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। গ্রামের নজরুল ইসলামের মাধ্যমে প্রতারক মাহমুদ হাসানের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে মেজর পরিচয় দিয়ে আমার চাকরির ব্যবস্থ্যা করে দেবেন বলে জানান। এ জন্য লোক মারফত চাকরির জন্য ছয় লাখ টাকা দাবি করেন। প্রথম পর্যায়ে চেকের মাধ্যমে তাকে টাকা দেয়া হয়। কিন্তু চাকরি না হওয়ার কারণে পরে চেক ফেরত নিয়ে নগদ ছয় লাখ টাকা তাকে দেয়া হয়। চাকরির সুবাদে আমাদের বাড়িতে তার যাতায়াত শুরু হয়। একপর্যায়ে আমার বাবা-মাকে বাবা-মা ডেকে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমার পরিবার রাজি হয়। সে বলেছিল, তার স্ত্রী মারা গেছে। তার তিন সন্তান রয়েছে। বিয়ে রেজিস্ট্রি করার সময় পরিবার এবং এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তার আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে।’

তিনি বলেন, আমার জীবন নষ্টকারী প্রতারক মাহমুদ হাসানের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আর কোনো মেয়ে বা পরিবারের সঙ্গে যেন এ ধরনের প্রতারণা করার সাহস কেউ না পায়।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাবা বলেন, আমরা ভুল করেছি। প্রতারক মাহমুদ হাসান আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে মেয়ের সর্বনাশ করেছে। আমি এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। মেয়ের চাকরি দেয়ার কথা বলে আমার বাড়িতে আসে সে। কথার ছলে পরে তার সঙ্গে বিয়ে দেই। ভিটেমাটি বন্ধক রেখে ছয় লাখ টাকাও দিয়েছি। আমি এই প্রতারকের কঠিন শাস্তি চাই।

র‍্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কাশেম বলেন, পরিবার এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর গ্রাম থেকে ওই ভুয়া মেজরকে আটক করা হয়েছে। সে আসলে একজন বই বিক্রেতা। ঢাকা থেকে বই নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। তার বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার সুলতানাবাদ গ্রামে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পর পুলিশে সোপর্দ করা হবে।