মালয়েশিয়ায় পাওনা টাকা পেলেন ১১৩৭ বাংলাদেশি


মালয়েশিয়ার ডাব্লিউ আরপি কোম্পানির কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে শুরু করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে পাওনা টাকা পেয়েছেন ১১৩৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। বেতন পেয়ে কর্মীদের মাঝে আশার সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বৃহত্তর এই কোম্পানিকে দেশটির হাইকোর্ট দেউলিয়া ঘোষণা করে লিকুইডিটর নিয়োগ করে। সম্প্রতি টায়েল পার্টনার্স নামক একটি কোম্পানি ২২ মিলিয়ন রিংগিত বিনিয়োগ করে ডাব্লিউ আরপি গ্রুপের দায়িত্ব গ্রহণ কর্মীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করছে।

কোম্পানিটিতে নতুন প্রধান নির্বাহী নিয়োগও দেয়া হয়েছে। কোম্পানির পক্ষে নিযুক্ত আইন সংস্থার থমাস ফিলিপ জানিয়েছেন, দ্রুতই উৎপাদন শুরু করতে পারবে এবং যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কাটানোর চেষ্টা শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে সকল সমস্যার সমাধান হবে।

গত বছরের শুরুতে ২ হাজার নেপালি কর্মী বকেয়া বেতনের দাবিতে অবরোধ করলে বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্ট সরেজমিন তদন্ত করে জানতে পারে কমীদের সময়মতো বেতন না দেওয়া, বেতন আটকে রাখা, ওভার টাইম না দেওয়া, অযৌক্তিকভাবে বেতন থেকে কর্তন, অন্যায়ভাবে সরকারি ছুটির দিনে বা বন্ধের সময় কাজ করিয়ে নেওয়া ইত্যাদি সমস্যা।

মালয়েশিয়ার মানবাধিকার, শ্রম ও অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ডিপার্টমেন্টকে সমস্যা সম্পর্কে জানালে আমেরিকার বর্ডার অ্যান্ড কাস্টমস কনট্রোল কর্তৃপক্ষ কোম্পানির উৎপাদিত গ্লোভ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টরা লিকুইডেটরদের সাথে বৈঠক করে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশিসহ সকল বিদেশি কর্মীদের মানবিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আইনগতভাবে সহায়তা প্রদান করার আশ্বাস দিয়েছে কোম্পানিটি।

হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘লিকুইডিটরের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ও লেবার ডিপার্টমেন্ট, কোম্পানি এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য মিশন নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’

এক কর্মকর্তা জানান, আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়ার লেবার মিনিস্ট্রির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে পুনরায় আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে নিযুক্ত আইনি সংস্থা থমাস ফিলিপ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, কুয়ালালামপুর হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাএল পার্টনার্স সকল দায়িত্ব নিয়েছে।

আইনজীবী ম্যাথিউ থমাস ফিলিপ জানান, এটি কোম্পানির জন্য একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এখন বন্ধ কারখানা সচল করবে এবং কর্মী, পাওনাদার এবং অন্যান্য সংস্থার বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে পারবে। ফলে চলমান অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে।

কর্মীদের মেনে চলার জন্য গাইড অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ব্যতীত প্রেস, টেলিভিশন বা রেডিওতে কথা বলার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশি কর্মীরা কোনোকিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এদিকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় সকল রফতানি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নীরিক্ষা করে ১ জানুয়ারি ২০২১ সালের মধ্যে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। ফলে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে না।

উল্লেখ্য, ডাব্লিউ আরপি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাব্লিউ আরপি এশিয়া প্যাসিফিক এসডি এন বিএইচডি (WRPAP), ডাব্লিউ আরপি রাবার প্রোডাক্ট এসডিএন বিএইচডি, ডাব্লিউ আরপি স্পেসিয়েলিটি এসডিএন বিএইচডি, অ্যাডভান্স হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট এসডিএন বিএইচডি (AHP) এবং অ্যাডভান্স মেডিকেল প্রোডাক্ট এসডিএন বিএইচডিতে (AMSP) ১৯২৭ জন বিদেশি কর্মী আছে তারমধ্যে ১১৩৭ জন বাংলাদেশি।