পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারি কম : কুলাউড়ার আদিবাসী পল্লীতে মাদকের ছড়াছড়ি


মোঃ নাজমুল ইসলাম :: মাদকের ছোবল এখন কুলাউড়ার আদিবাসী পল্লীগুলোতে। সমতলে মাদকের ক্রমবর্ধমান অবাধ ছড়াছড়ি থাকলেও বর্তমানে কুলাউড়া উপজেলার আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ী পল্লী (পুঞ্জি) গুলোতে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। দূর্ঘম পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অতি সহজেই পুঞ্জিগুলোতে মাদকের রমরমা ব্যবসা নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। মাদকের বিস্তার নিয়ে আদিবাসী পুঞ্জির এক হেডম্যান কুলাউড়া থানায় লিখিত একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত থেকে মদ, ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকসামগ্রী অতি সহজেই আসছে। যা কুলাউড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। কুলাউড়ার ৩১টি আদিবাসী পুঞ্জিতে খাসিয়া-গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস দীর্ঘদিন থেকে।কিছুদিন থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা এসব মাদকসামগ্রী পাহাড়ে নিয়ে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এতে মাদক সেবন করে আদিবাসী পুঞ্জিগুলোতে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও মাদকের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। মাদক সেবন করে অনেকে মাতলামি করেন, আবার পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ করে। যারফলে তাদের পারিবারিক বন্ধনেও প্রভাব ফেলছে। তবে সচেতন আদিবাসীরা পুঞ্জিগুলোতে মাদক নিরসনে গণস্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ কুলাউড়া থানাসহ প্রশাসনের অন্যান্য দপ্তরে দিয়েছেন। এসব অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, কর্মধা ইউনিয়নের সাহেব টিলা পুঞ্জির বাসিন্দা জেনেন স্নাল (৫০) দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশ্যে মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সামগ্রী বিক্রি করে আসছে। চা-বাগানের চিহিৃত এক মদ ব্যবসায়ীর সাথে আতাত করে তার পুঞ্জিতে মাদকদ্রব্যের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন। এতে কেউ প্রতিবাদ করলে জেনেন স্নাল হুমকি প্রদান করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী আমুলী পুঞ্জির হেডম্যান ও আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন (কুবরাজ) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রত্যুষ আশাক্রা বলেন, মাদক থেকে আমাদের প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে সকলকে সচেতন হতে হবে। চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের সম্প্রদায়ের দু’একজন মাদক বিক্রয়ে পাহাড়ী এলাকায় উৎশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। মাদক নির্মূলে আমুলী, পুঁটি ছড়া, নুন ছড়া ও ভালাইমা পুঞ্জির দেড় শতাধিক আদিবাসীদের গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছি। আমরা পাহাড়ে মাদকের ছোঁবল চাই না।

অভিযোগের বিষয়ে সাহেব টিলা পুঞ্জির জেনেন স্নাল প্রথমে বলেন, মদ বিক্রির বৈধ কাগজপত্র আছে। পরে কথা পাল্টে বলেন, এগারো জনের একটা পারমিট রাঙ্গিছড়া চা-বাগানের নরসামলু রাজভরের কাছ থেকে নিয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে মদ বিক্রি করে আসছি। আমি নিজে মদ খাই এবং মানুষদের মদ খাওয়াই।

কর্মধা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া থানার এস আই সানাউল্ল্যাহ বলেন, পাহাড়ী গহীন এলাকা হওয়ায় সেখানে যেতে পারিনি। তবে নরসামলু রাজভরের ছেলে একটা কাগজ দিয়ে গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।