সত্যায়নের ঝামেলা নেই ই-পাসপোর্টে


অবশেষে আলোর মুখ দেখতে চলেছে ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট)। আগামী ২২ জানুয়ারি (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে ই-পাসপোর্ট। এরপর তিনি উদ্বোধন করবেন এই কার্যক্রম। পাশাপাশি ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা শহরের বাসিন্দারা ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসময় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সচিব এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ই-পাসপোর্ট সর্বপ্রথম পাবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ধাপে ধাপে সারাদেশে চলবে এই কার্যক্রম।

অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ২২ জানুয়ারি উদ্বোধনের পরদিন ২৩ তারিখ অধিদফতরের আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা কার্যালয়ে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে। এছাড়া সচিবালয় ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের জন্য এই সেবা ২৩ জানুয়ারি থেকে চলবে।

বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারগুলো ইনস্টল করতে কিছু সময় লাগবে। ধাপে ধাপে সারাদেশের সব কার্যালয়ে জুনে এবং এই বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের বাইরে ৮০টি মিশনে ই-পাসপোর্ট সেবা পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে ই-পাসপোর্ট পেতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। কারণ ই-পাসপোর্ট তৈরির মেশিনগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল ও তিক্ষ্ম। আঙুলের ছাপ, ক্রনিয়া ইত্যাদি সঠিক ও স্বচ্ছভাবে না তোলা হলে মেশিন সেগুলো রিড করতে পারবে না। তাই সময় নিয়ে ডাটাগুলো এন্ট্রি করতে হবে।

বাংলাদেশের ‘সোনার হরিণ’ অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর (মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মতো) চিপ থাকবে। উত্তরায় এই পাসপোর্ট তৈরির স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্ট তৈরির চুক্তি করেন। এরপর ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে পাসপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনে অধিদফতর। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও কমার্শিয়াল ইমপোর্টেন্ট পারসনকে (সিআইপি) ই-পাসপোর্ট দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল। সর্বসাধারণকে জানুয়ারিতে পাসপোর্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।

আবেদনের ফরমে নতুন যা যুক্ত হচ্ছে
ফরমে ৮৭ ধরনের তথ্য চাওয়া হবে। এবার নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হচ্ছে। এই ফরমে পাসপোর্টের মেয়াদ (৫ বছর অথবা ১০ বছর) ও পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা (৪৮ অথবা ৬৪) এবং বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হবে।

এছাড়া ২৪ ঘণ্টার অতি জরুরি পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে আবেদনকারীকে নিজ উদ্যোগে আগেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আনতে হবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফরমে প্রি-পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নম্বর ফরমে উল্লেখ করতে হবে। আবেদনের সময় জমা দিতে হবে ক্লিয়ারেন্সের কপি।

এছাড়া এই পাসপোর্ট করতে আবেদনের ফরমে বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে কোনো ধরনের সত্যায়ন লাগবে না।

ই-পাসপোর্টের ফি
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (জননিরাপত্তা) মোস্তাফা কামাল উদ্দিন জানান, ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী সাধারণ পাসপোর্টের ফি ৩৫০০ টাকা, জরুরি ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং অতি জরুরি বাবদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। এছাড়া ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদের ক্ষেত্রে সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরি ফি যথাক্রমে ৫ হাজার, ৭ হাজার ও ৯ হাজার টাকা।

একইভাবে ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৫ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ৭ হাজার ৫০০ এবং অতি জরুরি বাবদ ১০ হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদের ক্ষেত্রে সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরি ফি যথাক্রমে ৭ হাজার, ৯ হাজার ও ১২ হাজার টাকা। সব ফি’র সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

শাহজালালে প্রস্তুত ই-গেট
ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের পাশাপাশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি ই-পাসপোর্ট গেট বসানো হয়েছে। এই গেট চালু হলে সহজ হয়ে পড়বে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া। ই-গেটের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা ৩০ সেকেন্ডের মতো সময়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

শাহজালালের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আরও ৫০টি ই-গেট স্থাপন করা হবে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এই ই-গেটগুলো স্থাপন করলেও এগুলো পরিচালনা করবে ইমিগ্রেশন বিভাগ।

যেভাবে কাজ করবে ই-গেট
ই-পাসপোর্ট নিয়ে যখন একজন ব্যক্তি ই-গেটের কাছে যাবেন, তখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে ই-পাসপোর্টটি রাখলে সঙ্গে সঙ্গে গেট খুলে যাবে। নির্দিষ্ট নিয়মে গেটের নিচে দাঁড়ানোর পর ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। এরপর সব ঠিকঠাক থাকলে ১২-১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই যাত্রী ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। তবে কেউ যদি ভুল করেন তা হলে লালবাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঠিকভাবে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারে সহযোগিতা করবেন।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের ফলে বাংলাদেশি পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়বে এবং ই-গেট ব্যবহার করে যাত্রীরা সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে গ্লোবাল পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান বাড়বে। ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়া সহজতর হবে, যা আমাদের জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *