প্রেম কর, তবে একলগে পাঁচজনের লগে কইরো না: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি


মোবাইলের এই যুগে একসঙ্গে একাধিকজনের সঙ্গে প্রেমের প্রবণতা বেড়েছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, এর পরিণাম ভয়াবহ হচ্ছে, বিয়ে বিচ্ছেদ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তব্যে নিজের এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ৭৬ বছর বয়সী আবদুল হামিদ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের নিয়ে অনেক খারাপ কথা শুনি। মোবাইল নিয়ে প্রেম কর। প্রেম কর, খারাপ না। একলগে পাঁচজনের লগে কইরো না। একজনের লগে প্রেম কইরা ১৫ দিন পরে আরেকজনের লগে কর, এটা করা ঠিক নয়।

“এর পরিণাম খুব ভয়াবহ হচ্ছে। ডিভোর্সের হার অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে বেশি হচ্ছে। একটা বাচ্চা হওয়ার পরও ডিভোর্স হচ্ছে। তাহলে এই বাচ্চাটার পরিণতি কী? তাকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি? খুব দুঃখজনক। আমাদের কালচারে এমন হওয়ার কথা নয়। আমাদের কৃষ্টিতে এমন হওয়ার কথা নয়। এখন অহরহ হচ্ছে।“

একে গুরুতর সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করে আবদুল হামিদ বলেন, “এটা দূর করতে হবে। দূর করতে হবে তোমাদের। তোমাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। যারা এমন করে তাদের অ্যাভয়েড করতে হবে।”

হাতে হাতে স্মার্টফোন আসায় এখন যে কোনো ঘটনায় সমস্যার সমাধানের দিকে না গিয়ে ঢালাওভাবে ভিডিও করার প্রবণতা নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, রাস্তায় একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট করল। আমরা হয়ত দাঁড়িয়ে আছি বা গাড়িতেৃ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ল, আমরা গাড়ি থেকে নেমে বাঁচানোর জন্য গিয়েছি। এখন হোন্ডা যখন এক্সিডেন্ট করে তখন আগে ভিডিও করে। কেমনে পড়ল সেইডা ভিডিও করে, তাকে বাঁচাবে, সাহায্য করবে, তার মধ্যে নেই।”

এ প্রসঙ্গে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই কয়দিন আগে বনানীতে আগুন লাগল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যেতেই পারে না, পাবলিকের ভিড়। সবাই ভিডিও করছে। হোয়াট ননসেন্স। এ ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। ছাত্রদের এসব বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।”

ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তনে বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দেন আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা মূল্যায়ন, ক্যারিকুলাম প্রণয়ন ও টিউশন ফি নির্ধাণসহ সব বিষয়ে নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। যারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন তাদের সব নিয়মনীতি মেনেই চালাতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা উচ্চশিক্ষার প্রসার চাই। তবে সার্টিফিকেটসর্বস্ব উচ্চশিক্ষা চাই না। তাই প্রয়োজনে ইউজিসি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং উচ্চশিক্ষার গুণগুত মান নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসারে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখলেও সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বা সব উদ্যোক্তা নিয়মনীতি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন না। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই বদ্ধ বাণিজ্যিক ভবনে পরিচালিত হয় যা উন্মুক্ত জ্ঞানচর্চার পথে বড় অন্তরায়।

ছাত্রদের উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, কখনও মিথ্যা ও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবে না। সর্বদা বিবেককে জাগ্রত রাখবে। মনে রাখবে, ব্যক্তির দুস্কর্মের ফল ব্যক্তি একা ভোগ করে না বরং সমগ্র জাতিকে তা ভোগ করতে হয়। আমাদের নবীন গ্র্যাজুয়েটরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রিয় মাতৃভূমির কল্যাণে অবদান রাখবে- এটাই প্রত্যাশা।

সমাবর্তনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ৭০৬ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েটসহ ১৬২০ জন গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি সনদ গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেসবাহউদ্দিন আহমেদ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *