প্রায় তিন যুগ পর নতুন ‘কোচে’ চড়বেন সিলেট আর চট্টগ্রামের মানুষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট ও চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই উপহার দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আগামী রবিবার সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত পাহাড়িকা-উদয়নের নতুন কোচের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
রেল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে পাহাড়িকা এবং ১৯৯৮ সালে উদয়ন ট্রেন চালু হয়েছিল। এই ট্রেনগুলো দীর্ঘ বছর ধরেই নতুন রুপে পরির্বতন হয়নি। ট্রেন যাত্রীদের দীর্ঘদিনের কষ্টের যাত্রা এবার পুরাতন ট্রেন ছেড়ে নতুন ট্রেনেই চলাচল করবেন সাধারণ যাত্রীরা। নতুন ট্রেন দেয়ার জন্য দীর্ঘদিনের দাবিও পুরণ হচ্ছে চট্টগ্রাম-সিলেটবাসীর। লাল-সবুজের মোড়লে নতুন সাজে সাজসে রেলপথে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে যোগাযোগের একমাত্র পরিচিত মাধ্যম পাহাড়িকা-উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি।
নতুন এই দুটি ট্রেনেই ভ্রমন করবেন ২ হাজার ৪৪৪ জন (যাওয়া-আসা)। প্রতিটি ট্রেনেই রয়েছে এসি-২টি, এসি স্লিপার-২টি, নন এসি-৭টি, পাওয়ার কার গার্ড রুমসহ নানাবিধ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। এই নতুন কোচ সংযোজনের কারণে ইতিমধ্যে অনেক যাত্রীর ট্রেন ভ্রমনের আস্থা বাড়ছে বলে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আগামী ২৬ জানুয়ারী রবিবার চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচলের অপেক্ষায় থাকা দুটি ট্রেনের নতুন এ কোচের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠান নিয়ে ইতিমধ্যে রেলপথ মন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে নানাবিধ প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামসুজ্জামান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে চট্টগ্রাম-সিলেটসহ আরো কয়েকটি নতুন ট্রেন উদ্বোধন করবেন। এতে উপস্থিত থাকবেন রেলপথমন্ত্রীসহ মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তবে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন উদ্বোধনী স্পটে জিএমসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। নতুন এই কোচের মাধ্যমে ট্রেন ভ্রমনকারীরা নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে আরাম-দায়কভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, উদ্বোধনী দিনে নতুন ট্রেন দুটির (উদয়ন-পাহাড়িকা) সামনের অংশসহ বিভিন্ন স্থানে ফুল দিয়ে সাজানো হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার মধ্যে ট্রেন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে আরো কঠোর নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তবে কিভাবে যাত্রীদের আরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেবার মান উন্নত করাসহ নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়ার তৈরি নতুন এই কোচগুলোর মধ্যে ঢাকা-জামালপুর রুটেও ‘জামালপুর এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন করবেন। একই কথা বললেন পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল জিএম সরদার শাহাদাত আলীও।
নিহাজ বিন নিটুল নামের এক ট্রেন যাত্রী বলেন, নতুন ট্রেনে করে উদয়নে ২৬ তারিখ চট্টগ্রাম-সিলেট যাবো। সিলেটরুটে আগের ট্রেনগুলো খুবই জরাজীর্ণ অবস্থা। ট্রেন দুটির বেশিরভাগ আসনই শোভন শ্রেণীর। এই ট্রেনগুলোতে ৩৭৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ ট্রেনগুলোতে কোমর সোজা করে প্রায় ১০-১১ ঘণ্টা ভ্রমণ করতে হয়। সড়কপথে নানা ধরণের কষ্টের কারণে ট্রেনেই চলাচল করি নিয়মিত। এখানে নতুন ট্রেন আশায় চলাচলটা আরো বেশী হবে এবং ট্রেন ভ্রমণে আরো আগ্রহীও হবে যাত্রীরা। একই কথা বললেন আরো একাধিক যাত্রী।
নতুন ট্রেনের সময়সূচী অনুযায়ী জানা গেছে, উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ে রাত পৌনে ১০টায় এবং সিলেট পৌঁছে ভোর ৬টা। আবার সিলেট থেকে পাহাড়িকা হয়ে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পাহাড়িকা চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশে সকাল ৯ টায় ছেড়ে যাবে।
রেলওয়ের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৬ জানুয়ারি থেকে ৭২৩ নং উদয়ন ট্রেনে এসি বার্থ থাকবে ৩৬টি, এসি চেয়ার ১১০টি, শোভন চেয়ার ৪৫০টি। অর্থাৎ এই ট্রেনে সর্বমোট টিকিট থাকবে ৫৯৬টি। অপর দিকে ৭২০ নং পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনে এসি সিট ৬৬টি, এসি চেয়ার ১১০টি, শোভন চেয়ার ৪৫০টি সহ সর্বমোট আসন থাকবে ৬২৬টি। কিন্তু বিপরীতমুখী অপর উদয়ন ও পাহাড়িকা ট্রেনের অধিকাংশই শোভন চেয়ার টিকিট হওয়ায় ২৬ জানুয়ারির পর থেকে নতুন ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা নতুন লাল-সবুজ কোচের মাধ্যমে চলাচল হবে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী ৭২৩ নং উদয়ন এক্সপ্রেস। একই রেক বা কোচ কম্পোজিশন দিয়ে সিলেট থেকে চট্টগ্রামমুখী ৭২০ নং পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন নতুন আসন বিন্যাসে যাত্রী পরিবহন করবে।
নতুন কোচ ও আধুনিক সুবিধা সংযোজন হওয়ায় উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের একমুখী ট্রেনের ক্ষেত্রে আসন বিন্যাস ও টিকিটের ভাড়াও পরিবর্তন হয়ে যাবে। পূর্বে ট্রেন দুটি ১৬/৩২ কম্পোজিশনে চলাচল করলেও নতুন নিয়মে ১৪/২৮ কম্পোজিশনে চলবে। পূর্বে ট্রেন দুটিতে নন এসি প্রথম শ্রেণী ছিল ১ টি কোচ। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি থেকে এসি প্রথম শ্রেণী কোচ থাকবে দুটি। এছাড়া আগে একটি এসি চেয়ার কোচের পরিবর্তে দুটি এসি চেয়ার এবং পূর্বের সকল শোভন শ্রেণীর কোচ পরিবর্তন করে ৯টি শোভন চেয়ার কোচ সংযোজন করা হবে। মূলত শোভন চেয়ার ৭টি হলেও দুটি খাবার গাড়ির প্রতিটিতে ৩০টি করে শোভন চেয়ার ধরে ১টি কোচ বিবেচনা করেছে রেলওয়ে।