দিরাইয়ে ১০ টাকায় আটকে গেল সিরাজের সাইকেল ভাড়া


সিরাজ মিয়া (৬০) সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের পরিচিত মুখ। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে বালাগঞ্জ উপজেলার গোয়ালাবাজার থেকে জীবিকারের তাগিতে দিরাইয়ে আসেন তিনি। 

জীবিকা হিসেবে পুরাতন সাইকেল ক্রয় করে ভাড়া দিয়ে উপার্জন করার পথ বেচে নেন। কিন্তু তিনি ৩২ বছর ধরে এই পেশায় থাকলেও হয়নি তার অবস্থার পরিবর্তন। 

৩২ বছর পূর্বে ২ টাকায় ১ ঘন্টা সাইকেল ভাড়া দিতেন মধ্যে ৫ টাকায় আর এখন ১০ টাকা ঘন্টা সাইকেল ভাড়া দেন। 

সিরাজ মিয়ার সাথের মটর বিক্রেতা, রিকসা ড্রাইবার, ঢেলাগাড়ী চালকসহ অনেক ছোটখাট ব্যবসায়ীর পরিবর্তন হলেও হয়নি সিরাজ মিয়ার কোন পরিবর্তন তিনি এখন থাকেন ভাড়াটিয়া বাসায়। ভাঙ্গা দোকানে তার সাইকেলের গ্যারেজ।

এব্যাপারে সিরাজ মিয়ার সিলেটভিউ২৪ডটকমকে জানান, ‍“আমি ৩৫ বছর আগে দিরাইয়ে এসেছিলাম তখন আমি ছোটদের পুরাতন সাইকেল কিনে ঘন্টা প্রতি ২ টাকা হিসেবে ভাড়া দিতাম। তখনকার সময়ে ধনী, গরীব, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবারের শিশুরা আসত আমার কাছে সাইকেল ভাড়া নিতে। পৌর শহরে অধিকাংশ লোক আমার কাছ থেকে সাইকেল নিয়ে সাইকেল চালানো শিখেছে। তাদের অনেকে এখন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে নিজস্ব গাড়ী চালায়। আমি কালের বিবর্তনে সাইকেল ভাড়া ক্রমান্বয়ে ২ টাকা থেকে ১০ টাকায় এনেছি। যা বর্তমান সময়ে খুব কম। আর এখন কেউ সাইকেল ভাড়া নিতেও চায় না। ১০ টাকা ঘন্টা সাইকেল ভাড়া দিয়ে আমার পরিবার চলে না। আর বেশি দিলে কেউ নিতেও আসবে না।”

তিনি বলেন, ‘এখন অনেকেই নতুন সাইকেল কিনে চালানো শিখে। দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মত রোজি করতে পারি।’

এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, সিরাজ মিয়ার সাইকেল ভাড়া নিয়ে এলাকার অনেক ছেলেরা সাইকেল চালানো শিখেছে। ২ টাকা ৫ টাকা ঘন্টা ৩৫ টাকায় সারাদিন। শিশুদের বিনোদন, বিকাশের ক্ষেত্রে সিরাজ মিয়ার সাইকেলের অবদান ছিল। আজ হয়ত প্রযুক্তির ছুঁয়ায় শিশুরা সাইকেল চালানো শিখতে এতটা আগ্রহী নয়। 

তারা আর জানান, ৩২ বছর পর ২ টাকা থেকে ১০ টাকা ঘন্টা সাইকেল ভাড়া বৃদ্ধি করা তেমন কিছুই না কারন আজকাল ৫/১০ টাকার কোন মূল্যই নাই তাছাড়া পার্কগুলোতে ভিজিটিং ট্রেন, রেলগাড়ি, পাইবেটশিপ, স্নিপার, সিসরাইড, বোট, টুইস্টার, বাম্পার কার, ফ্রুট ফ্লাইং চেয়ার, নাগরদোলা চড়ার মূল্য বছরের পর বছর যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তার তুলনায় সিরাজ মিয়ার সাইকেল ভাড়ার কোন মূল্যই বাড়েনি।