চাকরি হারানোর প্রতিশোধ নিতেই সিলেটে জোড়া খুন


চাকরি হারানোর প্রতিশোধ নিতেই সিলেটে খুন করা হয় ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর মিয়া (২৭) ও তাঁর বন্ধু রাজু আহমদকে (২৫)। পরে ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলো তারা। পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ট্রাকটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচক সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ের পাশে রেখে আসে। যেখানে দুর্গন্ধের জন্য কোনো গাড়ি থামে না বরং দ্রুত প্রস্থান করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে হত্যাকাণ্ডের এমন তথ্য দেন আটকরা।

এ ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চাকরি হারানো ট্রাকটির সাবেক চালক মো. ইব্রাহিম মিয়া তালুকদার (২৪), সহকারী ফজর মিয়া (২২) ও তাঁদের সহযোগী জয়নাল মিয়া (২৩)। গতকাল শুক্রবার রাতে ও আজ শনিবার ভোরে সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। পরে হত্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তাদের দেওয়া বর্ণনা মতে, পুলিশ ফজরের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিহতদের লুন্ঠিত মোবাইল সেট ও ট্রাকের টায়ার বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা জব্দ করে এবং গাড়ির টায়ার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশ পুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও (২৩) আটক করা হয়।

এসএমপির মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতার হোসেন বলেন, আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার আইলদীপুরের আতাউর রহমান। ইব্রাহিম ট্রাকচালক ও ফজর হেলপার ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাকটি ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে নিযুক্ত করেন গাড়ির মালিক। জাহাঙ্গীরের বন্ধু ছিলেন রাজু। সে পেশায় কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। পরদিন ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর থেকে ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় সাবেক চালক ও রাজুও নতুন চালকের সঙ্গী হন। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়।

আটকদের বরাত দিয়ে ওসি আখতার হোসেন আরও বলেন, হত্যার আগে তারা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে নিহতদের কাবু করে ফেলে। আর নিহত চালক জাহাঙ্গীরের বন্ধু রাজুও কিছুটা প্রতিবন্ধী টাইপের ছিলো। জাহাঙ্গীর গাড়ি নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে আসায় বেড়ানোর জন্য বন্ধুর সঙ্গী হয়ে প্রাণ হারায় রাজুও। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহিম। গাড়িটি মাধরপুরের জগদীশ পুর ও আউশকান্দি, সর্বশেষ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চণ্ডিপুলে এনে থামায় তারা। এরপর পরিকল্পনা করে মরদেহ দু’টি চালক ও হেলপারের সিটে বসিয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচকে রেখে যায়।  ঘটনাটি স্রেফ দুর্ঘটনা সাজাতে ট্রাকটি রাস্তার পাশে রেখে খুলে নেওয়া হয় ছয়টি চাকা। এরপর জগদীশপুর জয়নালের দোকানে নিয়ে চাকাগুলো বিক্রি করা হয়।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় নিথর দেহ দুটি। দেহের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ পরিকল্পিত হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করতে সক্ষম হয়।

খবর পেয়ে ট্রাক মালিক আতাউর রহমানসহ নিহতদের স্বজনরা মোগলাবাজার থানায় আসেন শনিবার দুপুরে। এ ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন বাদী হয়ে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন ওসি।

শুক্রবার সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জে সড়কে সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় একটি ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) চালক ও হেলপারের আসনে রাখা অবস্থায় জাহাঙ্গীর ও রাজুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বাগদী গ্রামের মো. কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া (২৭) ও দীন মোহাম্মদের ছেলে রাজু আহমদ (২৫)।