ফুল চাষ করে বছরে আয় ৫ লাখ টাকা


সাতক্ষীরা সদরের আলীপুর এলাকার আকরাম আলীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে ফুল। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ করেন তিনি। সেই ফুল বাগান থেকে বছরে আয় করছেন ৫ লাখ টাকা। মৃত আহাদুল্লাহ্ সরদারের ছেলে আকরাম আলী (৬০) বর্তমানে ৭ বিঘা ৮ কাঠা জমিতে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁধা ও গাজরা ফুল চাষ করছেন। বাড়ির পাশে ২ বিঘা জমিতে রয়েছে গাজরা ফুল। এছাড়া পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি এলাকায় ৫ বিঘা ৮ কাঠা জমিতে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁধা ফুল। ফুল ব্যবসার লাভের টাকায় ১৫ বিঘা মাছের ঘেরও করেছেন। বসত ভিটার ১৫ শতক জমি ছাড়া তার কোনো জমি নেই।

আকরাম আলী বলেন, ‘১৯৮০ সালে ৮ শতক জমি নিয়ে ফুল চাষ শুরু করি। ফুল চাষে লোকসানের সম্ভাবনা নেই। ঠিকমত পরিচর্যা ও চাষ করতে পারলে প্রচুর লাভ হয়। বর্তমানে ৭ বিঘা ৮ কাঠা জমিতে ফুল চাষ করছি। এরমধ্যে বাড়ির পাশে ২ বিঘা জমিতে রয়েছে গাজরা ফুল। ২৫ হাজার টাকায় ২ বিঘা জমি ইজারা নিয়েছি। গাজরা ফুল চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এ বাগান থেকে কমপক্ষে ২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো। এ ফুল চাষে বাড়তি কোনো খরচ নেই। এ বছর আরও ৩ বিঘা জমিতে গাজরা ফুলের চাষ করবো।’

পাটকেলঘাটার মিঠাবাড়ি এলাকার বাগান সম্পর্কে আকরাম আলী জানান, পৌনে ২ বিঘা জমিতে রয়েছে রজনীগন্ধার চাষ। যা চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা। বিক্রি হবে ৪ লাখ টাকার বেশি। ১২ কাঠা জমিতে রয়েছে গোলাপের চাষ। খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। বিক্রি হবে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। এছাড়া ২ বিঘা ১৫ কাঠা জমিতে রয়েছে গাঁধা ফুলের চাষ। যা চাষ করতে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। বিক্রি হবে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। মোট ৫ বিঘা ৮ কাঠা জমিতে বছরে ইজারা দিতে হয় ৮৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ফুল চাষ করে বছরে তার খরচ বাদ দিয়ে ৪-৫ লাখ টাকা লাভ হয়।

সফলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফুল ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে ১৫ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে মাছের ঘের করেছি। এসব ফুল সাতক্ষীরা জেলার সব উপজেলাসহ যশোরের কেশবপুরে সরবরাহ করি। জেলায় আমি একমাত্র ফুল চাষি। ফলে ফুল চাষের কোনো পরামর্শমূলক সহযোগিতা নেওয়া সম্ভব হয় না। কৃষি বিভাগও কোনো সহযোগিতা করে না। ১৯৮০ সাল থেকে অল্প জমিতে ফুল চাষ শুরু করলেও ২০০০ সালে আলীপুর এলাকায় ১২ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। সেই থেকে বড় পরিসরে ফুল চাষের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালে নগরঘাটার মিঠাবাড়ি এলাকায় চাষ শুরু করেছি। আমার একার পক্ষে জেলায় ফুলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে ফুল ব্যবসায়ীদের অন্য জেলা থেকে ফুল আমদানি করতে হয়।’

ফুলের বাজার দর কম-বেশি হয় জানিয়ে আকরাম আলী বলেন, ‘প্রতি পিচ গোলাপ বিক্রি করি ৫ টাকা, রজনীগন্ধা ৬ টাকা ও গাঁধা ফুল ১ হাজার ১৫০ টাকা। প্রতিদিন বিক্রি করা দামের তারতম্য ঘটে। বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের দাম বেশি হয়।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাদত হোসেন বলেন, ‘তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তবে ফুলের ব্যবসা করে বর্তমানে অবস্থা ভালো। বর্তমানে পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা এলাকায় গড়ে তুলেছেন ফুলের বাগান।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘জেলায় আকরাম আলী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ফুল চাষি নেই। ফুল চাষি না থাকায় আমাদের কোনো জরিপ কার্যক্রমও নেই। তবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’