ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি চীন : শি জিনপিং


প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাস দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দেশটিতে নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় শনিবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ এক বৈঠকে তিনি ওই সতর্ক বার্তা দেন।

চীনের সরকারি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকে শি জিনপিং বলেছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে চীন।

দেশটির মধ্যাঞ্চলের উহান প্রদেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রথম শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এই ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার তিনশ জনে পৌঁছেছে। চীনের এই ভাইরাস ইতোমধ্যে বিশ্বের ১২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির বেশ কিছু শহরে ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

এই ভাইরাসের উৎসস্থল হিসেবে পরিচিত উহানে রোববার থেকে প্রাইভেট যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তারের আশঙ্কায় এই শহরের বাসিন্দাদের অন্য কোথাও চলে যাওয়া কিংবা শহরে কাউকে আসতে দেয়াও হচ্ছে না।

দেশটিতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় দৈনিক পিপলস ডেইলি বলছে, দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে এ দুটি হাসপাতাল নির্মিত হবে। এতে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। উহানে ইতোমধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাঠানো হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হয় উহানে। শনিবার চান্দ্রবর্ষ উদযাপন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির বিভিন্ন শহরে বাতিল করা হয়েছে। দেশটির বেশ কিছু শহরে জরুরি মেডিক্যাল চেকআপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে শহরে চলাচলকারী মানুষের শরীরে জ্বরের কোনও আলামত আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া একাধিক শহরে ট্রেন স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

হংকংয়ে সর্বোচ্চ মাত্রার জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা এবং স্কুলে ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশ্বের ১২টি দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, চীনে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত বা ভ্রমণরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। এর নম্বর (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।

বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এ হটলাইন চালু করেছে বলে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এক বার্তায় জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রেখেছে চীন। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আটকা পড়েছেন অন্তত ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে। সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কিনা তা এখনো অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *