সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। গত পাঁচদিনেই সিলেট বিভাগে সড়কে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ১৭ জন। এরমধ্যে মঙ্গলবার পৃথক দুর্ঘটনায় মারা যান ৫ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘন কুয়াশার কারণে শীত মৌসুমে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তীব্র গতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেক আর ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণেও দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
গত পাঁচদিনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটছে। ভোরে বা সকালে। যখন কুয়াশার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে।
মঙ্গলবার মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে হবিগঞ্জের দুর্ঘটনাটি ঘটে ভোর ৫টায়। ভোরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবলের একটি বাস অটোরিকশাকে চাপা দিলে অটোরিকশার চালক আখতার মিয়া (৪০) ও তার প্রতিবেশী রকিব মিয়া (৩০) নিহত হন।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ভোরের দিকে খুব কুয়াশা ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে কুয়াশার কারণেই এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সকালে সদর উপজেলার মনমুখ ইউনিয়নের বাউরবাগ এলাকায় অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে মোজাহিদুর রহমান (৩৪) ও আলামিন (২৫) নিহত হন। এতে আহত হন আরও তিনজন।
একইদিন সকালে সিলেটের কানাইঘাটে একটি ট্রাক্টর উল্টে ঘটনাস্থলেই এর চালক দবিরুল ইসলাম ডব্লিউ (৩৫) নিহত হন। সোমবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ট্রলি চাপায় মারা যান কালু মিয়া (৪২) নামের এক মাটি শ্রমিক।
রোববার দুপুরে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সাদাপাথর নামক পর্যটকবাহী বাসের ধাক্কায় চানা মিয়া নামের এক বৃদ্ধ নিহত হন।
এরআগে শনিবার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার দরগা গেইট এলাকায় দ্রুতগামী ইউনিক বাসের চাপায় এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আর শুক্রবার একই দিনে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন।
শুক্রবার সকালে হবিগঞ্জের বাহুবলের ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে দুই নারী ও গাড়ির চালকের সহযোগী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫জন। নিহতরা হলেন- বাসের চালকের সহযোগী আবু সাঈদ (৩০), কমলা বেগম (৩৫) ও রিতা দেবনাথ (২৮)। এই সকালেই হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি এলাকার মিনাজপুর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নানু মিয়া নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাপায় তামান্না বেগম নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। আর মৌলভীবাজারের রাজনগরে ট্রাকের ধাক্কায় ফজল মিয়া নামের এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট বিভাগের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, সিলেট অঞ্চলে সন্ধ্যা থেকে ঘন কুয়াশা পড়ে। প্রায় দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। ফলে অতি সাবধানতার সাথে গাড়ি চালালেও দুর্ঘটনা ঘটে যায়। চালকদের কিছু করার থাকে না।
প্রসঙ্গত, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করা সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’-এর তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলায় ২০১৮ সালে ১৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৯৫ জন মানুষ এবং আহত হন ৪৯৯ জন। ২০১৯ সালে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২৪০টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬১৮ জন ও আহত হন ২৩৮ জন। নিসচা বলছে, ২০১৮ সালের চেয়ে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৯ সালে ৪২৩ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন।