ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহকালে ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্টার নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর।
সোমবার বিকেলে ওই জিডি থানায় নথিভুক্ত হয়। জিডি নম্বর ৯৬।
এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের তথ্য সংগ্রহে গিয়ে ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করার পর এবার তাদের বিরুদ্ধেই জিডি করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদ।
রোববার রাতে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি সংবাদ ও পেশাদার ৩ সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে তিনি গেন্ডারিয়া থানায় জিডিটি করেন। জিডিতে পেশাদার তিন সাংবাদিককে কেন্দ্রে ‘বিএনপি জামাতের এজেন্ট হিসেবে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করেন’ বলেও উল্লেখ করা হয়।
গেন্ডারিয়া থানায় জিডিটি হলেও তারা তিনজন অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে গেন্ডারিয়ার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিল বলে জাগো নিউজ নিশ্চিত হয়েছে।
হেনস্তার পর উল্টো মিথ্যে অভিযোগ তুলে থানায় ছাত্রলীগ নেতার জিডির পর নিরাপত্তাহীনতা, পেশাগত কাজে বাধা ও হয়রানি আতঙ্কে নিরাপত্তা চেয়ে আজ সোমবার জিডি করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী সাংবাদিক নুরুল আমিন।
তিনি বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি অফিস কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ কার্ড নিয়ে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেন্ডারিয়া থানাধীন ৪৬ নং ওয়ার্ডে যাই। সেখান থেকে ফরিদাবাদ মাদরাসা কেন্দ্রে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের লক্ষ্যে যাই। এ সময় আমার সঙ্গে ছিল দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আসাদ ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের অপরাধ প্রতিবেদক মাহবুব মমতাজি।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে আমরা ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করে নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। নির্বাচনে কর্তব্যরত প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলি। তিনি নিজে বুথগুলো ঘুরিয়ে দেখান এবং তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।
প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করে বের হতেই পাশের কক্ষে হট্টগোলের শব্দ শুনে সেখানে যাই। সেখানে সাংবাদিক পরিচয় জানা মাত্রই আমার ও মাহবুব মমতাজির মোবাইলফোন কেড়ে নেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদ। তার সঙ্গে থাকা অন্যদের নিয়ে টেনে-হেঁচড়ে বের করে অবরুদ্ধ করে আমাকেসহ তিনজনকেই এলোপাতারি মারধর করে।
সে সময় কর্তব্যরত পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও না পেয়ে পূর্ব পরিচিত ডিএমপি’র ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হান্নানুল ইসলামকে বিষয়টি জানাই। তিনি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমাদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করেন এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদের কাছ থেকে আমাদের দু’জনের ছিনিয়ে নেয়া মোবাইলফোন ফিরিয়ে দেয়।
ওই ঘটনার পর আমরা সেখান থেকে ফিরে আসি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই নিরাপত্তার জন্য জিডির মাধ্যমে পুলিশকে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘জিডিটি তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এখানে উল্লেখ্য যে, পেশাগত দায়িত্বরত সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে হেনস্তা করার পর উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বহিষ্কারাদেশের কথা জানানো হয়।