পুনর্বাসন কেন্দ্রের শিশুদের শিকলে বেঁধে নির্যাতন কর্মকর্তাদের


বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শিশুদের শিকলে বেঁধে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাওলানা ভাসানী সড়কের পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুই শিশুকে শিকলে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও কয়েকদিন আগে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায় কেন্দ্রের বালক শাখার দুই শিশুর পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।

পুনর্বাসন কেন্দ্র সূত্র জানায়, সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন ওই কেন্দ্রের বালক ও বালিকা শাখায় ১৫৪ জন ছিন্নমূল শিশু রয়েছে। এর মধ্যে বালক শাখায় ৭২ জন ও বালিকা শাখায় ৮২ জন। তাদের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

পুনর্বাসন কেন্দ্রের কয়েকজন শিশু জানায়, এখানে আমাদের দিয়ে সব ধরনের কাজ করানো হয়। স্যারদের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) জামা-কাপড় ধুয়ে দিতে হয়। জুতা পরিষ্কার করতে হয়, হাত-পা ও মাথা ম্যাসাজ করতে হয়। এসব না করলে খাবার দেয়া হয় না। কোনো কোনো সময় স্যাররা রাগ করলে আমাদের মারধর এবং শিকল দিয়ে বেঁধে শাস্তি দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঝালকাঠির একটি আদালত দুজন শিশুকে শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠান। ওই দুই শিশুকে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখা হতো। তাদেরকে মারধরও করা হয়েছে। নির্যাতনের মুখে গত ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যায় এক শিশু।

শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রকল্প উপপরিচালক বাসুদেব দেবনাথ বলেন, কেন্দ্রে আমিসহ ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছি। এর মধ্যে কেউ যদি শিশুদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।

নির্যাতনের মুখে শিশু পালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে বাসুদেব দেবনাথ বলেন, পালিয়ে যাওয়া শিশুটি অনেক চঞ্চল। তাকে এখানে পাঠানো পর থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। নির্যাতনের কারণে সে পালিয়েছে এমন তথ্য সঠিক নয়। একটি মহল প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এ ধরনের খবর ছড়াচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও এমন কেউ থাকতে পারেন।

বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, যেখানে শিশুদের সুরক্ষার ও যত্নের জন্য পাঠানো হয় সেখানে নির্যাতনের ঘটনা অমানবিক। কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই শিশুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। তবে ব্যবস্থা না নেয়ায় দুর্ব্যবহার থেকে এখন শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনা থেকে কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নেতিবাচক চিত্র ফুটে ওঠে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিশু নির্যাতনের সঙ্গে যারাই জড়িত তদন্ত করে তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বরিশাল সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক আল মামুন তালুকদার বলেন, শিশুদের শিকলে বেঁধে রাখাসহ বিভিন্ন মৌখিক অভিযোগের বিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলামকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রটিতে শিশুদের খাবার বিতরণে কিছু অনিয়মের তথ্য জানা গেছে। সামগ্রিক বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।