বেড়েছে ধানের দাম, তবুও লোকসানের ভয়


লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ইরি-বোরো চাষাবাদে ব্যস্ত নওগাঁর চাষিরা। শীতের মৌসুমে কয়েক দফা বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা, শীত ও আবহাওয়া বিপর্যয়ে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেরিতে শুরু হয়েছে চাষাবাদ। কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে তাদের ঘরে ধান নেই। বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে তা বড় বড় ব্যবসায়ীদের। সরকার ধান কিনলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। এ বছর ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। চলতি রোপা-আমন মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল।

চাষিরা জানান, গত কয়েক বছরে ধানের আবাদ করে লোকসানে পড়েছেন চাষিরা। গত বছর বোরো ধান ঘরে ওঠার আগেই ফনীর প্রভাবে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একদিকে ধানের উৎপাদন কম, অন্যদিকে শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি এবং বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন কৃষকরা। প্রতিবিঘা জমিতে আবাদ করতে ১২-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছিল ১৫-১৯ মণ।

অপরদিকে সার, ওষুধ ও কাটা-মাড়াইসহ আমন ধানের আবাদ করতে প্রায় ৮-৯ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি প্রায় ১৮-২২ মণ। প্রথমদিকে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও পরে কীটনাশক প্রয়োগে রক্ষা পায়। সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে আগাম আমন ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে খোলা বাজারে দাম নিয়ে সারা বছরই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। বর্তমানে বাজারে জিরাশাইল ১০৩০-১০৪০ টাকা, কাটারি ১১০০-১১৫০ টাকা, চিনিগুড়া ১৯০০-১৯৫০ টাকা, আমন স্বর্ণা-৫, ৭২০-৭৪০ টাকা। গত ১৫ দিনে প্রতিমণ ধানে ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে।

বদলগাছী উপজেলার ভাতশাইল গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে আছে। পানি, সেচ ও হাল চাষ করে জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত শীতের কারণে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে আবারও বীজ রোপণ করতে হয়েছে। যে কারণে রোপণের কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে।’

চাকরাইল গ্রামের কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, ‘গত বছর বোরো ধানের আবাদ করতে গিয়ে খরচ বেশি ও ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সরকার যে ধান কিনছেন, তা পর্যাপ্ত না। যে কারণে খোলা বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হয়। সরকারের উচিত কৃষকদের ধানের দাম দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা। বেশি ধান কিনলেও কৃষকরা উপকৃত হবে।’

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ) মো. মাহবুবার রহমান বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান রোপণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ জমি রোপণ হয়েছে। শীতের কারণে বীজতলা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকরা পরবর্তীতে পুষিয়ে নিয়েছেন।’