পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে সিলেট জেলা পুলিশ প্রশাসন নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। অনলাইনে আবেদন করে কিভাবে এই সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তারা।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন সহজ করার লক্ষ্যে সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিচতলায় একটি নতুন কাউন্টার খোলা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। এই কক্ষে সেবা নিতে আসা মানুষ যাতে কোন ধরণের হয়রানি না হন এজন্য সিসি ক্যামেরা পুলিশ সুপার নিজে মনিটিরিং করেন।
সিলেটে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে পূর্বে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ৩০২ নাম্বার নামে একটি কক্ষ নির্ধারিত করা ছিল। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং এই বিভাগকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন নিজে এখন থেকে এই বিভাগকে তদারকি শুরু করেছেন। তিনি সিলেটভিউ২৪ডটকমকে জানিয়েছেন, শুধু পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে হয়রানি বন্ধ নয় পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে হয়রানিও বন্ধ করা হবে।
এ বিভাগকে পুরোপুরি স্বচ্ছতা আনতে তিনি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। তাদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, সিলেট থেকে আমি চলে গেলেও এই বিভাগে যাতে আর কোন দুর্নাম না ছড়ায়। পুলিশের প্রতি মানুষের যে দুর্নাম সেটা দূর করতে তিনি এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
সার্টিফিকেট পেতে যা করতে হবে: সিলেটের কোন নাগরিক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় চালান জমা দিতে হবে। ৫০০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দেয়ার সময় ১৭৩০১ ০০০১ ২৬৮১ কোড লিখতে হবে।
আর কোন বাংলাদেশী নাগরীক বিদেশে থাকলে তার পাসপোর্টের কপি সেদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করে আনতে হবে। এরপরে উপরের নিয়মানুযায়ী ব্যাংকে চালান জমা দিতে হবে।
পরে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইডে গিয়ে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর অপশনে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করার জন্য প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করে আইডি খুলতে হবে।
পরে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সাইটে লগইন করে এপ্লাই মেনুতে ক্লিক করে আবেদনটি যথাযতভাবে পুরণ করতে হবে। ফরমের প্রথম পাতায় ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য ও দ্বিতীয় পাতায় বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা পুরণ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় সকল কাগজ স্ক্যান করে আপলোড ও save and continue তে ক্লিক করতে হবে। অনলাইনের এ ফরমে আপলোডকৃত সকল তথ্য দেখাবে আবেদনকারীকে। আবেদনে কোন ভুল থাকলে তা পূর্ববর্তী ধাপসমূহে ফেরত গিয়ে পরিবর্তন করা যাবে। তবে আবেদনটি সাবমিট করার পর আর কোন পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আবেদনটি সঠিক হলে ফাইনাল সাবমিটে গিয়ে কনফার্ম অপশনে ক্লিক করতে হবে।
এবার ব্যাংকে জমা দেয়া চালান স্ক্যান করে চালান অপশনে গিয়ে আপলোড করে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার তারিখ ও চালান নাম্বার আপলোড করতে হবে আবেদনকারীকে। আবেদনটি সাবমিটের পরে একটি রেফারেন্স নাম্বার আসবে, তা সংগ্রহ করে রাখা ভালো।
পুলিশের যে কাজ: অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর আবেদন করার পর আবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি আইডিতে জমা হয়। এরপর এটি সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরণের পর তদন্তের পর মূলত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। এরপরে থানার ওসির স্বাক্ষরের পর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের স্বাক্ষরের পর এই সার্টিফিকেটটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বাক্ষরের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চলে আসে এই সার্টিফিকেটটি। এরপর পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে কিংবা নিজ থানা থেকে ইস্যুকৃত এই সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় আবেদনকারীকে।
জানা গেছে, কেউ যেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সরাসরি তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে।
পুলিশ সুপার ফরিদ সিলেটের মানুষের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, কোন ট্র্যাভেল এজেন্সির কাছে না গিয়ে নিজে নিজে অনলাইনে আবেদন করার। আবেদনের পর এটি পেতে ৫ থেকে ৭ কর্ম দিবস লাগবে।
ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে সিলেটে পুলিশ সুপারের নতুন এ উদ্যোগ নিয়ে। সিলেটবাসী বলছেন, পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি বন্ধ হলে সিলেটে পুলিশের সেবা আরেক ধাপ বেড়ে যাবে।