ওয়াহিদের ব্যতিক্রমী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস


বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে যশোরে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করলেন বৃক্ষপ্রেমী ওয়াহিদ সরদার। দিবসটিতে যশোরে বিনোদন কেন্দ্রে গিয়ে গাছের চারা বিতরণ করেছেন গাছ দরদী এ মানুষটি। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে নয়, স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসহ বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষের মাঝে তিনি গাছের চারা বিতরণ করে গাছ ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের আহ্বান করেছেন এ গাছপ্রেমী। পার্কে ঘোরা মানুষও তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ওয়াহিদ সরদার যশোরে বৃক্ষপ্রেমিক, গাছ দরদী, গাছবন্ধু নামে সমাধিক পরিচিত। এ মানুষটি গত তিনবছর ধরে সড়কের পাশে থাকা গাছ থেকে পেরেক ও ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করে চলেছেন। এ কাজই তাকে এনে দিয়েছে গাছ দরদী, গাছবন্ধুর পরিচিতি। পেশায় রাজমিস্ত্রি ওয়াহিদ সরদার তিনটি শাবল ও বাইসাইকেল নিয়ে প্রতিদিন যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল গ্রামের বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। সাইকেলের সামনে একটি সাইনবোর্ড বাঁধা। তাতে গাছে পেরেক মারার ক্ষতি বিষয়ে সতর্ক বার্তা লেখা থাকে।

ওয়াহিদের দাবি, গাছের সঙ্গে তার সখ্য শিশুকাল থেকেই। তবে শুরুটা ২০০৬ সাল থেকে যশোর সদরসহ নানা জায়গায় গাছ লাগানোর মাধ্যমে। এ পর্যন্ত ২০ হাজারের অধিক গাছ লাগিয়েছেন। যার মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজারের মতো গাছ বেঁচে আছে। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার পান। এ পুরস্কার তাকে অনুপ্রাণিত করে। এরপর গাছ নিরপত্তাহীনতায় রয়েছে এমন অনুভূতি থেকে তিনি গাছের শরীরে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড ঝুলানো বন্ধ ও তা অপসারণে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। আশ্বাস দিলেও প্রশাসন কাজটি না করায় নিজেই ২০১৮ সালের ৪ জুলাই বেড়িয়ে পড়েন গাছকে যন্ত্রণা থেকে রক্ষার অভিযানে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তার দেয়া অর্থের সহায়তায় বানানো শাবল দিয়ে ভয় ও শঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৮শ কিলোমিটার সড়কের পাশের গাছ থেকে পেরেকে ও সাইনবোর্ড অপসারণ করেছেন ওয়াহিদ সরদার।

ওয়াহিদ সরদার জানান, আজ ভালোবাসা দিবসে তিনি গাছের প্রতি ভালোবাসার প্রচারণা চালাচ্ছেন। সকালে যশোর সামাজিক বনবিভাগের দপ্তরে গিয়ে তিনি তার ইচ্ছার কথা জানান। এসময় কর্তৃপক্ষ তাকে ১০০টি কাগজি লেবু, করমচা, উলোট কম্বল, পেয়ার, বকুল ও জলপাই গাছের চারা দেয়। সেই চারা নিয়ে পৌর পার্কে আসেন এবং পার্কে আগত যুগলদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ করেন। অনেকে নিয়েছে আবার অনেকে নিতে চায়নি।

তিনি আরও বলেন, আজ যারা পার্কে এসেছে তারা একে অপরকে ভালোবাসে। তাদের গাছ দিলাম। তারা এ গাছ লাগিয়ে দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে পারবে। মানুষের মৃত্যু হলেও এ ভালোবাসা গাছরূপে স্মৃতি হয়ে থাকবে।

এদিকে গাছ পেয়ে উচ্ছ্বসিত পার্কে আসা যুগলরাও। শেখ শাজাহান নামে একজন বলেন, ওয়াহিদ সরদারকে আমি চিনি। ইউটিউব, ফেসবুকে ওনাকে নিয়ে অনেক নিউজ আছে। ওনাকে পেরেক তোলা, ব্যানার ফেস্টুন তোলার কারণে চিনতাম। আজকে ভালোবাসা দিবসে গাছ বিতরণ করতে দেখে খুব ভালো লাগলো।

সামিরা ইয়াসমিন নামে এক তরুণী বলেন, ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনের কাছ থেকে ফুল পেয়ে যতটা না আনন্দিত, গাছের চারা পেয়ে আরও বেশি সন্তুষ্ট।

শিল্পী আক্তার নামে এক নারী বলেন, সন্তান-স্বামীকে নিয়ে পার্কে এসেছি। এসে গাছের চারা উপহার পেয়ে খুবই আনন্দিত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *