সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অন্তত ১০০ কোটি স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট হ্যাকিংয়ের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ, সেগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আপডেটেড নয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভোক্তা অধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘হুইচ?’ গুগলের সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বের অন্তত ৪০ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ আপডেটগুলো পাচ্ছে না। অ্যান্ড্রয়েড ৪ বা এরচেয়েও পুরনো অপারেটিং সিস্টেমের ফোনগুলোই সবচেয়ে বেশি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি, আপডেট না পাওয়া অ্যান্ডয়েড ৭ ব্যবহৃত ফোনও ঝুঁকিপূর্ণ।
গুগল-নির্মিত সর্বশেষ সফটওয়্যার ভার্সন হচ্ছে অ্যান্ড্রযেড ১০। অ্যান্ড্রয়েড ৮ ও ৯-কেও আপডেটেড হিসেবে নিরাপদ মনে করা হয়।
হুইচ?-এর সম্পাদক কেট বেভান বলেন, দামী অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর এত অল্প সময়েই নিরাপত্তা সহযোগিতা হারিয়ে ফেলা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এতে কোটি কোটি ব্যবহারকারী হ্যাকারের খপ্পরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, সেগুলোর (অ্যান্ড্রয়েড ফোন) মেয়াদ কতদিন থাকবে, মেয়াদ শেষ হলে গ্রাহকদের কী করতে হবে- এ ধরনের তথ্যের বিষয়ে গুগল ও ফোন নির্মাতাদের আরও স্বচ্ছ হওয়া দরকার। স্মার্ট ডিভাইসের সিকিউরিটি আপডেটের বিষয়ে স্বচ্ছতা আনতে নির্মাতাদের জন্য সরকারকেও সুপরিকল্পিত নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করা উচিত।
ঝুঁকিতে কোন ফোন?
হুইচ?-এর বিশেষজ্ঞরা ক্ষতিগ্রস্ত ফোন ও ট্যাবলেট নিজস্ব ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে বেশ কিছু মডেলের ফোন এখনও অ্যামাজনের মতো অনলাইন বিক্রয় সাইটগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।
গবেষকরা মটোরোলা এক্স, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩, সনি এক্সপেরিয়া জেড২, নেক্সাস ৫-সহ বেশ কিছু মডেলের ফোন সংগ্রহ করেন। এগুলোর বেশিরভাগই কমপক্ষে একবার হ্যাকড হয়েছে, কোনও কোনওটি একাধিকবারও হ্যাকারের কবলে পড়েছে।
‘হুইচ?’ জানায়, সাধারণত ২০১২ সালের দিকে বা তারও আগে বাজারে আসা অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩ ও সনি এক্সপেরিয়ার মতো জনপ্রিয় মডেলগুলোই হ্যাকারদের বেশি পছন্দ।
কীসের ঝুঁকি?
ঝুঁকিতে থাকা ডিভাইসগুলোতে ফিশিং লিংক পাঠিয়ে হ্যাকাররা সহজেই সেটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। এভাবে তারা ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ছবি বা ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে অর্থ চুরি, ব্ল্যাকমেইল বা চাঁদা দাবি করে থাকে। আপডেটেড সফটওয়্যার বিশিষ্ট ফোন অনেক ক্ষেত্রেই ফিশিং লিংক প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
হুইচ?-এর দাবি, সাধারণত দুই বছরের পুরনো ফোনগুলোতে সফটওয়্যার আপডেট দেয়া বন্ধ করে দেয় ডেভেলপাররা। গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করতে বললেও কিছু কিছু মডেলের ফোনে এ ধরনের আপডেট নেয় না। ফলে, ক্রেতা নিরাপত্তার ঝুঁকির কারণে নতুন ফোন কিনতে বাধ্য হন।
অ্যান্ড্রয়েডের বর্তমান অবস্থা
গুগলের ২০১৯ সালের হিসাবে, বিশ্বজুড়ে ২ কোটি ৫০ লাখ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৪২ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহকই অ্যান্ড্রয়েড ৬ বা এরচেয়ে পুরনো অপারেটিং সিস্টেম ( মার্শমেলো-২০১৫, ললিপপ-২০১৪, কিটক্যাট-২০১৩, জেলিবিন-২০১২, আইসক্রিম স্যান্ডউইচ-২০১১ ও ২০১০ সালের জিনজারব্রেড) ব্যবহার করেন।
এক নজরে ঝুঁকিতে থাকা স্মার্টফোন
-স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩ (২০১২)
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৬ (২০১৫)
-স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫ (২০১৭)
-সনি এক্সপেরিয়া এস (২০১২)
-সনি এক্সপেরিয়া জেড২ (২০১৪)
-মটোরোলা এক্স (২০১৩)
-গুগল নেক্সাস ৫ (২০১৩)
সৌজন্যে : ডেইলি মেইল ।