মরণোত্তর অঙ্গদান প্রক্রিয়ায় একজনে বাঁচতে পারে আটজন মৃতপ্রায় মানুষ


কিডনি বিকল হয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। জীবিত নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে কিডনি বিযুক্ত করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হয় বলে কিডনি দাতা বা ডোনার সংকট এখানে প্রকট। অথচ ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা মরণোত্তর অঙ্গদান প্রক্রিয়ায় এসব মানুষকে বাঁচানো সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশে ৬০-৭০ ভাগ ক্যাডাভারিক কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হচ্ছে। এর মাধ্যমে একজন মানুষ বাঁচাতে পারে আটজন মানুষকে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে বা দেশের প্রচলিত আইনে অঙ্গদানে কোনো বাঁধা না থাকলেও বাংলাদেশে এখনো চালু করা যায়নি মরনোত্তর টান্সপ্ল্যান্ট। এজন্য দরকার সচেতনতা ও আশু উদ্যোগ।
বুধবার বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্যোগে বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুল হাই চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যানটেশন ফাউন্ডেশনের (ইউএফটিবি) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম, চ্যানেল২৪ এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভান্সড সেন্টার অব কিডনি এন্ড ইউরোলজির (আকু) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহরাব হোসেন সৌরভ, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিধু ভূষন দাস, ডা. মো. শোয়েব নোমানী প্রমূখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, দেশের ৫০ ভাগ মানুষ এখনো জানে না যে তাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। অথচ এই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ কিডনি, হার্ট, লিভার বিকলসহ অন্যান্য রোগের জন্য দায়ী।

তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক বা ৪০ বছরের ওপরের কোনো মানুষেরা উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, তার রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হচ্ছে কি না, ডায়াবেটিস আছে কি না, ওজন বেশি কি না নিরূপণ করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন অন্তত দুই-তিন লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা, পর্যাপ্ত শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়া, অতিরিক্ত চিনি ও লবণজাতীয় খাবার, বাসি, পঁচা বা খোলামেলা খাবার, ফাস্ট ফুড কোমল পানীয়, অ্যানার্জি ড্রিংকস, মদ্যপান পরিহার করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন না করাসহ নিয়মিত শরীরচর্চা, খেলাধুলা, দৌড়ানো ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

বাংলাদেশ ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যানটেশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম বলেন, প্রতি বছর সড়ক দূর্ঘটনায় দেশে এক হাজারের মতো মানুষ মারা যায়। মরনোত্তর অঙ্গদান প্রক্রিয়ায় এই এক হাজার মানুষ বাঁচাতে পারে আট হাজার মৃতপ্রায় মানুষকে। মরনোত্তর অঙ্গদান প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে তিনি সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে সব মহলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

অ্যাডভান্সড সেন্টার অব কিডনি এন্ড ইউরোলজির (আকু) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহরাব হোসেন সৌরভ বলেন, কিডনির সুস্থতায় সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে কম খরচে চিকিৎসা দিতে আকু বরাবরই নিবেদিত। আমরা তৈরি করেছি ‘অসুখে সুখের নীড়’, যাতে আপনজনের মতো সেবা পেয়ে প্রতিটি রোগীই যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি যায় হাসিমুখে।

তিনি জানান, আকু’তে রয়েছে লেজারসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। বাংলাদেশে প্রথম থুলিয়াম লেজারের মাধ্যমে বয়স্ক পুরুষের প্রস্টেটের বৃদ্ধিজনিত বাধার অপারেশন করা হয় আকুতে। ফলে প্রস্টেট অপারেশন এখন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত ও জটিলতাবিহীন  ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *