আমরা পরিস্থিতিকে যতটা ভয়ংকর বানিয়েছি, বাস্তবে ততটা নয়’ করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মাইকেল লেভিট এ কথা বলেছেন। সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ভাইরাসটি নিয়ে আশাবাদী অনেক তথ্য দিয়েছেন।
করোনা মহামারীর সমাপ্তি নিকটবর্তী বলে জোর দিয়ে বলেন স্ট্যানফোর্ডের এ জৈবপদার্থবিদ, ‘করোনার কথা উঠলেই এটি মানুষকে অনেক ভীত করে তোলে। কারণ প্রতিদিনই নতুন নতুন আক্রান্তের খবর আসছে। কিন্তু সংক্রমণ হার কমে আসার অর্থ ভাইরাসের সমাপ্তি খুব কাছাকাছি। মার্চ শেষেই চীন থেকে এটি অদৃশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মাইকেল লেভিট ২০১৩ সালে রসায়নে নোবেল পান। তার বক্তব্যের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ বিশ্বের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা যখন আরও কয়েক বছর ভাইরাসটির থেকে যাওয়া এবং চীনে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলেন, তিনিই একমাত্র বলেন, ‘আক্রান্ত ৮০ হাজারে গিয়ে ঠেকবে এবং ৩ হাজার ২৫০ জনের মৃত্যু হতে পারে।’ গত ৩১ জানুয়ারি চীনে নতুন ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। আগের দিনই এ সংখ্যা ছিল ৪২ জন। মৃত্যুর ক্রমহ্রাসকে স্মরণ করে লেভিট মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যার সত্যতা মিলেছে। গত ১৬ মার্চ চীন সরকার জানায়, এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার ২৯৮ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ জনের। ১৪০ কোটি মানুষের চীনে প্রত্যেক বছর এমনিতেই ৪০ লাখ মানুষ মারা যায়।
লেভিটের দাবি, ‘বেশিরভাগ মানুষের শরীরে কভিড-১৯ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সংক্রমণের মধ্য অবস্থা অতিক্রম করেছে। ইতালিতে বয়স্ক মানুষ বেশি থাকায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি। কিন্তু আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি। এখন আতঙ্ক নিয়ন্ত্রণটা জরুরি। মহামারী নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেজারমেন্ট) নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি এও বলেন, ‘আস্ফালনকারী এপিডিমিওলজিস্টরা করোনা নিয়ে যে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তথ্য তা সমর্থন করে না।’ নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ৭৮টি দেশের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান চিত্র নয়, নতুন ঘটনার ক্ষেত্রে কভিড-১৯ আক্রান্তদের ৫০ শতাংশের বেশি প্রত্যেক দিন সুস্থ হচ্ছেন। এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া ভাইরাসের প্রবৃদ্ধির শ্লথকেই প্রকাশ করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর গতিপথ লেভিটের বক্তব্যকে সমর্থন করে না। জনস হপকিংস ইউনিভার্সিটির তথ্যে, শুক্রবারের ১৬ হাজার ১৮ জন আক্রান্ত ও মৃত ২১০ জন থাকলেও, এখন তা হয়েছে আক্রান্ত ৩৫ হাজার ২২৪ জন এবং মৃত ৪৭১।
এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘করোনা ঠেকাতে ফ্লু টিকা নেওয়ার সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। ইতালিতে টিকাবিরোধী আন্দোলন খুবই শক্তিশালী, হয়তো এজন্যই সেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ টম হানক্স ও ইদ্রিস আলবার মতো সেলিব্রেটিকে সামনে এনে সংবাদমাধ্যম সাধারণ মানুষের মনে করোনা আতঙ্ক বাড়িয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
লেভিট করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন, ‘করোনার বাড়াবাড়ি অন্য সংকট বাড়াবে। মানুষ চাকরি হারাবে। হতাশায় আত্মহত্যার হার বেড়ে যেতে পারে।’ ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞরা ২০০৭-০৯ সালের মতো বিশ্বমন্দার আভাস দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে মাইকেল লেভিট প্রচুর ইতিবাচক খবর প্রত্যাশা করেন। সবাইকে একটিই বার্তা দিতে চান, ‘করোনা জগৎ ধ্বংস করতে পারবে না।’