করোনায় অনলাইনে পড়ায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা


করোনা ব্যাধি সংক্রমণরোধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত হতে নিষেধ করা হয়েছে। এ মহামারির মধ্যেও বিদেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা সচল রাখতে অনলাইনে নিয়মিত শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে। নতুন সেশনে ভর্তির প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা লকডাউনের মধ্যে ঘরে বন্দি থাকলেও পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। অন্যদিকে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রাখায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পড়ালেখা থেকে দূরে আছে। বাসা-বাড়িতে মোবাইল, ইউটিউবে, গেম খেলে বা বাড়ি বসে অসল সময় পার করছে।

মিরপুর ১৩ নম্বরে বসবাস করেন সাজ্জাদ রহমান। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে নাহিন কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েটে প্রথম বর্ষে পড়ে। অন্যজন অনিক দেশেই একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। করোনা ব্যাধি সংক্রমণের আশংকায় দুই জনেরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক হল ছেড়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে চলে যেতে বলায় গত ২৩ মার্চ নাহিন কানাডা থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছে।

বাড়িতে আসলেও নাহিনের ব্যস্ততার শেষ নেই। অনলাইনে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রুটিন করে ক্লাস নিচ্ছেন। পড়ার ভিডিও পাঠাচ্ছেন। মেইলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে উত্তর মেইলে দিচ্ছেন। এ্যাসাইনমেন্ট জমা, সেমিনার, কুইজ, শ্রেণি পরীক্ষা, ফাইনাল পরীক্ষা সবই চলছে। একটি নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়। বাংলাদেশে থেকেই নাহিন প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। আগামী ৭ মে থেকে স্প্রিং সেশনের ক্লাস শুরু হবে। ৫ মের মধ্যে ফি জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়েছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা নাহিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এরই মধ্যে স্প্রিং কোর্সে ক্লাস করাতে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম লিখিয়েছে।

অন্যদিকে অনিকের যেন সময়ই কাটছে না। মোবাইল চালাচ্ছে, গেম খেলছে, কিছুক্ষণ ছবি আঁকছে। এপ্রিলে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কিছু বিষয়ের পড়া (বাড়ির কাজ) স্কুলের মেইলে মাঝে মাঝে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ পড়াগুলো শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ বই, খাতাপত্র দেখেই করছে। বাড়ির কাজগুলো শেষ করে স্কুলের মেইলে পাঠাতে বলা হয়েছে। কোন কোন পড়া ২০/২৫ দিন আগে পাঠানো হলেও তা ঠিক হয়েছে কি না এখনো শিক্ষার্থীদের জানানো হয়নি। গত দুই সপ্তাহ থেকে বাড়ির কাজও আর দেয়া হচ্ছে না। জুলাই মাসে নতুন ক্লাসে উঠার কথা। নতুন ক্লাসে কি প্রস্তুতি নিতে হবে তার কোন দিক নির্দেশণা দেয়া হয়নি এখনো পর্যন্ত। প্রায় পড়াশুনা ছাড়াই অনিকের দিন কাটছে।

অনিক কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কানাডা অনেক দূরে। অথচ ভাইয়া কত পড়াশুনা করছে। আর আমার স্কুল থেকে তেমন কিছুই জানাচ্ছে না। অনলাইনে ভাইয়া পরীক্ষা দিচ্ছে। আমাদের পরীক্ষা হবে না জানিয়েছে। ভাইয়ারা ক্লাস করছে। আমাদের ক্লাস হচ্ছে না। মোবাইলে ইউটিউব দেখে, গেম খেলে দিন কাটছে তার, জানায় অনিক।

অন্যদিকে নাহিন কালের কণ্ঠকে বলেন, অনলাইনে পড়ালেখার সব কিছুই চলছে। অনলাইনে পরীক্ষার প্রশ্ন বেশ কঠিন করা হয়েছে। অনলাইনে প্রশ্নগুলো এমনভাবে দেয়া থাকছে যে বই, খাতাপত্র, নোট, ইন্টারনেট থেকে খুঁজে বের করে বা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে বা অন্য কারো কাছ থেকে জেনে উত্তর লেখার মত বাড়তি সময় দেয়া হয় না। প্রশ্নপত্র পেয়ে টানা উত্তর লিখতে হয়।

অনিক বলে, শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়ে ক্লাস নিয়ে ভিডিও আপলোড করে দেয়। না বুঝলে বার বার ভিডিও দেখি। প্রশ্ন থাকলে অন লাইনে পাঠাই। উত্তরগুলো মেইলে পাঠিয়ে দেন। অনেক পরীক্ষার নম্বর সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ২৪ এপ্রিল উইন্টার (জানুয়ারী থেকে এপ্রিল) সেশনের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সামনে মে থেকে জুলাই স্প্রিং, আগষ্ট পর্যন্ত সামার এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর ফল সেশনের ক্লাস চলবে। সবই অন লাইনে হবে। নির্ধারিত ফি বাংলাদেশ থেকে পাঠিয়ে দিতে হবে।

এই দুই শিক্ষার্থীর বাবা সাজ্জাদ রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার এক ছেলে কানাডার পড়াশুনা বাংলাদেশে বসে করছে; আর অন্যজন অলস সময় কাটাচ্ছে। করোনা দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। এ দীর্ঘ সময়ে পড়ালেখা বন্ধ রাখা হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। যা পরে পুষিয়ে নিতে সমস্যা হবে।

করোনা ব্যাধি দেখা দিলে মার্চের শেষ ভাগে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে সরকারি নির্দেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ড কমিশন (ইউজিসি) থেকে বলা হলে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অন লাইনে সীমিত পরিসরে ক্লাস নিলেও কিছু দিন থেকে তা বন্ধ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষক কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের অধিকাংশ জায়গায় ইন্টারনেট আছে। তবে এখনো গ্রামের অনেক বাড়িতে ইন্টারনেট নেই। এসব গ্রামের কোন শিক্ষার্থী যদি অন লাইনে যুক্ত হতে না পারে তবে সে অনলাইনের ক্লাসে যোগ দিতে পারবে না, পরীক্ষাও দিতে পারবে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থী আমাদের কাছে মূল্যবান। তাই এখনই অন লাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। তবে করোনা আঘাত দীর্ঘ মেয়াদী হলে এর জন্য নতুন করে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনলাইনেই পাঠ দান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

অন্যদিকে দুই চারটি স্কুলে মেইলে কিছু বাড়ির কাজ দিলেও তা এখন প্রায় বন্ধ রয়েছে। বাড়ির কাজ করে শিক্ষার্থীরা স্কুলের মেইলে পাঠালেও পড়াগুলো ঠিক হয়েছে কি না তা এখনো জানানো হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া করোনাব্যাধির কারণে দেশব্যাপি ছড়িয়ে থাকা অধিকাংশ স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা বন্ধ রয়েছে।

আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ হিসাবে আরো প্রায় চার মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *