করোনায় স্বামীর মৃত্যু, শোকে দুই সন্তানকে নিয়ে রেললাইনে ঝাঁপ স্ত্রীর


ভারতের শিলিগুড়িতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়েই দুই সন্তান নিয়ে রেললাইনে মরণ ঝাঁপ দিলেন স্ত্রী। মারাত্মকভাবে আহত ওই নারীর ও তার ২ ও ৪ বছরের দুই সন্তানকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এই ঘটনার হতবাক শিলিগুড়ির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের চম্পাসারি এলাকার বাসিন্দারা।

ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মৃত ৩৮ বছর বয়সের ওই তরুণ ভারতের খড়িবাড়ির রামজনম নামক একটি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। লকডাউন চলায় স্কুল বন্ধ। তাই এখন বাড়িতেই ছিলেন। শিলিগুড়ি ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের চম্পাসারি এলাকায় বাড়িতে ছোট দুই শিশুকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক দিন থেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি সহ করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন ওই শিক্ষক। ৩ জুলাই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে দেখাতে গেলে সেখানেই তাকে ভর্তি রাখা হয়। করোনা পজেটিভ রিপোর্টও আসে। তারপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল।

ডাক্তাররা জানান, পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরেই তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তাকে বাঁচানোর সমস্ত চেষ্টা হয়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করেই সোমবার গভীর রাতে মারা যান তিনি।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর খবর পান। আর তাতেই ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। প্রতিবেশীরা জানান, সকালে ওই শিক্ষকের মৃত্যু সংবাদ আসতেই দুই শিশুকে নিয়ে পাগলের মতো বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান তার স্ত্রী। বাধা দিয়েও আটকাতে পারেননি তাকে। এরপরেই একেবারে এনজেপিতে গিয়ে হাজির হন। সেখানেই ফুট ওভারব্রিজ থেকে দুই কন্যা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ঝাঁপ দেন রেললাইনে। দেখতে পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয়রা।

ছুটে আসে রেল পুলিশ। মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভর্তি করা হয় মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে। পরে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হয় তাদের।

স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে পারেননি ওই নারী। তার জেরেই এমন কাণ্ড বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। তবে পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসিপি (ওয়েস্ট) কুনওয়ার ভূষণ সিং জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। মা ও দুই সন্তানের আঘাতই খুব গুরুতর। তাদের সুস্থ করে তোলার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছেন ডাক্তাররা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *