গরিবের ভাতার দেড় কোটি টাকা মেম্বার-চেয়ারম্যানের পকেটে!


রংপুরের মিঠাপুকুরে সরকারিভাবে গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা মেম্বার-চেয়ারম্যানদের পকেটে। ওই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তিন ভাগে বিভক্ত- বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় দেড় কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব টাকা লুটপাটের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলায় ১৭ ইউনিয়নে বয়স্ক ১ হাজার ৯১৭ জন, বিধবা ১ হাজার ৭০৮ জন এবং ৩ হাজার ৫০ জন প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভাতাভোগীরা বয়স্ক ৬ হাজার, বিধবা ৬ হাজার ও প্রতিবন্ধী ৯ হাজার করে টাকা উত্তোলন করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানরা দুস্থদের উত্তোলনকৃত টাকার মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

অনুসন্ধানে এমন তথ্য মিলেছে বালারহাট ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম বয়স্ক ভাতাভোগীর কাছ থেকে। কয়েক দিন আগে তিনি বালারহাট ব্যাংক হতে ৬ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। টাকা তোলার পরই ইউপি সদস্য ৫ হাজার টাকা নিয়ে ১ হাজার টাকা দেন নজরুল ইসলামকে। শুধু নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি, একই কায়দায় উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার দুস্থের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা তুলে লুটপাট করেছেন ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানরা।

বালারহাট ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী আবু সাইদ বলেন, আমি ব্যাংক হতে ৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেছি। মেম্বার ৯ হাজারের মধ্যে আমাকে দিয়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা। বাকি টাকাগুলো ভাতা করে দেয়ার জন্য তিনি কেটে নিয়েছেন।

একই অভিযোগ করেন প্রতিবন্ধী কারিমন নেছার বাবা কায়দে আজম। তিনি বলেন, আমি সাড়ে ৪ হাজার টাকা তুলেছি। এর মধ্যে পেয়েছি মাত্র ১ হাজার টাকা।

বিধবা ভাতাভোগী জুলেখা বেগম বলেন, ভাতা করার জন্য আগাম ৩ হাজার টাকা দিয়েছি। ৬ হাজার টাকা তোলামাত্রই মেম্বার ৫ হাজার টাকা কেটে নিয়েছেন।

স্থানীয় আবদুল খালেক ও শাহ জালাল বলেন, টাকা ছাড়া কোনো ভাতা হয় না। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা অগ্রিম ও প্রথম উত্তোলনের সময় মোটা অংকের টাকা কেটে নেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, আমরা নির্বাচন করার সময় টাকা খরচ হয়েছে। সেগুলো তোলার জন্য আমাদের টাকা কেটে নিতে হচ্ছে। এছাড়াও এই টাকার ভাগ অনেক জায়গায় দিতে হয়।

বালারহাট ইউপি সদস্য মনজু মিয়া বলেন, অনেকে ভাতা করে দেয়ার সময় টাকা দিতে পারে না। এজন্য প্রথম কিস্তির উত্তোলনের সময় টাকা কেটে নেয়া হয়। তবে সবার কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়নি।

বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নতুন ভাতাভোগীদের টাকা উত্তোলনের সময় মোটা অংকের টাকা কেটে নেয়ার বিষয়ে কেউ আমাকে অভিযোগ দেয়নি। তারপরও আমি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করব। দোষী ব্যক্তিরা কখনই ছাড় পাবে না।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ফিরোজ কবীর বলেন, এ ধরনের অভিযোগ এখনও পাইনি। তবে শোনা যাচ্ছে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ভাতাভোগীদের টাকা কেটে নিচ্ছেন। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *