করোনার বিরুদ্ধে ক্রুড ভ্যাকসিনের মতো কাজ করে ফেস মাস্ক!


করোনার শুরু থেকেই ফেস মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। এবার জানা গেল করোনার বিরুদ্ধে ফেস মাস্ক ব্যবহার কাঁচা (ক্রুড) ভ্যাকসিনের মতোই কাজ করে।

বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, মানুষকে ফেস মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ করা হয় এজন্য যে, তারা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নিঃসরিত ক্ষুদ্রকায় কণা মাস্কের মাধ্যমে নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারে এবং এর উদ্দেশ্য এভাবে ভাইরাস ছড়ানো কমিয়ে আনা। এটা এজন্য করা হয় না যে, কেউ ভাইরাসে সংক্রমিত হবে না। একটা সার্জিক্যালই হোক অথবা কাপড়ের মাস্কই হোক এর মাধ্যমে কিছু ভাইরাস বের হবেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্কের মাধ্যমে অন্যের দেহে স্বল্প পরিমাণে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এক ধরনের প্রতিরোধক (ইমিউনাইজেশন) হিসেবে কাজ করে। এই তত্ত্বটি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’ এর সম্পাদকীয়তে ছাপা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, এটা একটা ধারণা, এটা প্রমাণ করার জন্য মানুষকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত করা যাবে না এবং এমন হলে তা হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনৈতিক একটি কাজ। বিজ্ঞানীরা এর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন যে মানুষের উচিত মাস্ক ব্যবহার না করে আত্মতুষ্টিতে ভোগা। আবার উদ্দেশ্যেমূলকভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার চেষ্টা করাও কারো উচিত হবে না।

ওই জার্নালে অবশ্য বলে দেয়া হয়েছে যে, ‘এটা কোনো সুপারিশ নয়।’ মানুষের উচিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরের মধ্যে থাকলেও দূরত্ব বজায় রাখার কাজটি করে যাওয়া। তারা বলছেন, মানুষকে ভাইরাসে আক্রান্ত করার (ভাইরোলেশন) পদ্ধতি শতাব্দী পুরনো একটা কৌশল। এই পদ্ধতিতে কৌশলে মানুষকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জীবাণুতে সংক্রমিত করা হয় এবং এক সময় নিজের মধ্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠে। অতীতে এ ধরনের কৌশলে গুটি বসন্তের প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলা হতো মানুষের দেহে কিন্তু শেষত: টিকা আবিষ্কারের মাধ্যমেই গুটি বসন্ত থেকে মানুষকে নিরাপদ করা হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়ার সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. মনিকা গান্ধী এবং এপিডেমিওলজিস্ট অধ্যাপক জর্জ রুথারফোর্ড বিশ্বাস করেন যে, ফেস মাস্ক একইরকম ভাইরোলেশন কৌশলেই কাজ করে করোনার বিরুদ্ধে। ড. মনিকা গান্ধি বলেন, আপনি হয়তো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু আপনার শরীরে কোনো লক্ষ্মণ নেই। অতএব আপনি যদি লক্ষ্মণহীন হয়ে থাকেন তাহলে আপনি মাস্কের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন।

তারা বলছেন, দুর্বল ভাইরাসে সংক্রমিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তি তেমন মারাত্মকভাবে ভুগবেন না এবং স্বল্পমাত্রায় এবং লক্ষ্মণহীনভাবে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধী হয়ে থাকতে পারেন। যুক্তরাজ্য সরকারের ‘সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি ইমাজিন্সি গ্রুপ’ বলছে বেশি ভাইরাস কোনো একজনকে কতটুকু আক্রান্ত করবে সে ব্যাপারে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা রোগীর দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রতিরোধী ক্ষমতাও গড়ে তোলে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার মাস্ক ব্যবহার ভাইরাসের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে।

তবে সমালোচকরা মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে তোলার এই পদ্ধতিকে বাতিল করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, এটা খুবই বিপজ্জনক একটি পদ্ধতি। মানুষের মধ্যে আত্মতুষ্টি চলে আসলে তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *