ট্রাম্পের আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র হুমকির মুখে


৩ নভেম্বরের নির্বাচনটি ছিল আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ এবং ভোট গ্রহণ/গণনায় কোন ক্রুটি অথবা কারচুপির কোন ঘটনা ছিল বলে প্রমাণও পাওয়া যায়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে সাইবার সিকিউরিটি এবং ইনফ্রাস্ট্রাক্চার সিকিউরিটি এজেন্সির (সিআইএসএ) শীর্ষ কর্মকর্তাসহ নির্বাচন কমিশনের পদস্থ কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, ভোট নিয়ে কারচুপি অথবা জালভোট কিংবা গণনায় কোন ত্রুটির অবকাশ ছিল না। সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে ট্রাম্পের বিজয়কে ছিনতাইয়ের অভিযোগও সঠিক নয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে তারই প্রশাসনের শীর্ষকর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভোট গ্রহণের পদ্ধতিতে কোন হেরফের ঘটেনি বা ব্যালট গায়েব করাও সম্ভব ছিল না। অথবা ব্যালট পাল্টিয়ে কোন প্রার্থীর পরাজয়ে ভূমিকা রাখাও সম্ভব ছিল না।

বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার যে আশংকা ছিল অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে-তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সকল মহল সজাগ ছিলেন এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর ছিলাম সকলে। সে আলোকেই আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না’-বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে সাইবার সিকিউরিটি এবং ইনফ্রাস্ট্রাক্চার সিকিউরিটি এজেন্সির উপ-পরিচালক ব্রায়ান ওয়্যার পদত্যাগ পত্র সাবমিটের পরই অপর কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার এই বিবৃতি প্রদান করেছেন।

পোস্টাল ব্যালটে ব্যাপক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে এবং সেই ব্যালটের গণনার পরই ট্রাম্প পরাস্থ হয়েছেন বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অভিযোগ করছেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র সাইবার সিকিউরিটি কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধচিত্তে এই বিবৃতির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। শিগগিরই ট্রাম্প তাদেরকে বরখাস্ত করতে পারেন আশংকা থেকে সকলকে সঠিক তথ্য জানালেন।

এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টফার র‌্যা, সিআইএসএ পরিচালক ক্রিস্টফার সি ক্রেবসকেও যে বরখাস্তের তালিকায় রাখা হয়েছিল। কারণ তারা কেউই ট্রাম্পের উদ্ভট অভিযোগে সায় দেননি। ট্রাম্প বলছেন যে, পোস্টাল ব্যালটে ডেমক্র্যাটরা কারচুপি করেছে।

ভোট গ্রহণের পর ৯দিন অতিবাহিত হলো, তবুও ট্রাম্প ফলাফল মেনে নিয়ে যো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি। অধিকন্তু প্রতিদিনই ভোট জালিয়াতি আর কারচুপির অভিযোগ করছেন। মামলা করেছেন বেশ কটি স্টেটে। সেগুলোর অধিকাংশই আদালত কর্তৃক নাকচ হয়ে গেছে। জর্জিয়া স্টেটের ভোট পুনরায় গণনা করা হচ্ছে ট্রাম্পের আবেদনে।

অপরদিকে, ভোটে বিজয়ী যো বাইডেনের ট্যাঞ্জিশন টিমকে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা যাতে কোন ধরনের সহায়তা না দেয় সে নির্দেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাইডেনকে অভিনন্দন বার্তা পাঠাচ্ছেন-সেগুলোও স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে যথাযথভাবে বাইডেন টিমকে দেয়া হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের হার পুনরায় উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের স্বার্থেই ট্র্যাঞ্জিশন টিমকে সর্বাত্মক সহায়তা জরুরী বলে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয় সিনেটররাও বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, মামলার ফলাফল অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া যাবে। তার আগে বাইডেন টিমকে সহযোগিতা করা উচিত। এটি গণতান্ত্রিক রীতি এবং তা মেনে চলা উচিত সকলেরই। ক্যাপিটল হিলে রিপাবলিকান সিনেটরদের অধিকাংশই বলেছেন যে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসী হামলার শংকা নিয়ে কোন গোপনবার্তা/আভাস গোয়েন্দাদের কাছে থাকলে সেটি বাইডেন টিমের জানা জরুরী। আর এভাবেই বাইডেন যে ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তারও ইঙ্গিত এলো রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্য থেকেও। সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম মিজৌরির সিনেটর রয় ব্লান্ট বাইডেন টিমকে বলেন, ‘তারা সবকিছু জানতে হবে এটি আমি মনে করি না। তবে কিছু বিষয় তারা জানা উচিত। এরমধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়টি অন্যতম।’

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলসী বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টির লোকজন জনরায়কে সম্মান না জানানোর পন্থা অবলম্বন করেছেন, যা গোটা জাতির জন্যেই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। এমন পরিস্থিতিতে আমি বলতে চাই যে, আগুনে পুড়ছে গোটা বাড়ি, চেয়ে চেয়ে দেখছি, পানি ঢেলে কেউ নেভানোর চেষ্টা করছি না।’

ট্রাম্পের স্বৈরাচারি মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন টিমের ৫ শতাধিক সদস্য সংবিধান রীতি অনুসরণে সক্ষম হচ্ছেন না। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে সক্ষম হচ্ছেন না। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসমূহের ফাইল কিংবা যোগাযোগের নথি, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সাথে সভা-সমিতি, ফোনে কথাবার্তার সূত্র জানতে পারছেন না। এ অবস্থায় ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর চলমান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। অর্থাৎ সর্বত্র নাজুক অবস্থা তৈরীর আশংকা করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে আর কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়নি।

উদ্ভুত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সিনেটে ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান (রিপাবলিকান) আইওয়ার সিনেটর চার্লস ই গ্র্যাসলী বলেছেন, জনতার রায়ের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। ১৩ ডিসেম্বর ইলেক্টরাল কলেজ প্রতিনিধিগণ ভোট দেবেন প্রেসিডেন্টকে। তার আগেই বাইডেনকে অভিনন্দন জানালে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ভালো হবে বলে মন্তব্য করেছেন এই সিনেটর।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *